২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা চলাকালীন বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় ১১ আসামিকে মুক্তি দেওয়ার গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বিভি নাগারথনা এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ ১২ অক্টোবর এই মামলার সিদ্ধান্ত সংরক্ষণ করেছিল। গুজরাট সরকারের মুক্তির সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। যার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ তার রায় ঘোষণা করে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে গুজরাট সরকার দোষীদের সাজা মুকুবের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বরং মহারাষ্ট্র সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। উল্লেখ্য, বিলকিস বানো মামলার শুনানি হয়েছিল মহারাষ্ট্রে।
গুজরাট সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে দুটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। প্রথম আবেদনে আসামিদের মুক্তি চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। দ্বিতীয় পিটিশনে, মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়েছিল। যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে গুজরাট সরকার দোষীদের মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। মুক্তিপ্রাপ্ত ১১ আসামির নাম হল- যশবন্ত নাই, গোবিন্দ নাই, শৈলেশ ভাট, রাধেশ্যাম শাহ, বিপিন চন্দ্র জোশী, কেসারভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোর্ধিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট এবং রমেশ চন্দনা। এ বিষয়ে আদালত প্রশ্ন তোলেন, মুক্তির ক্ষেত্রে শিথিলতার সুবিধা কেন শুধু বিলকিস বানোর আসামিদের দেওয়া হলো? কেন অন্য বন্দীদের এমন ছাড় দেওয়া হয়নি?
বিলকিস বানো মামলায় তার রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গুজরাট সরকারের দোষীদের বেকসুর খালাস দেওয়ার সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই নির্দেশের পর ফের ১১ অপরাধীকে জেলে ফিরতে হবে।
গুজরাট সরকারের কোনো অধিকার নেই
পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, গুজরাট সরকারের মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও অধিকার নেই, তাহলে অপরাধীদের ক্ষমা করার প্রশ্নই বা কীভাবে আসে। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে যে যদি শুনানি মহারাষ্ট্রে হয়, তবে সেখানকার রাজ্য সরকারের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে, কারণ যে রাজ্যে অপরাধীর বিচার হয় এবং সাজা হয়, কেবলমাত্র সেই রাজ্যেরই দোষীদের ক্ষমার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের কড়া মন্তব্য
নির্যাতিতার আবেদনের শুনানি করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, অপরাধ বন্ধ করতে শাস্তি দেওয়া হয়। মানুষের কষ্ট অনুভব করা উচিত।
এই ক্ষেত্রে, বিলকিসের আবেদনের পাশাপাশি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মার্কসবাদী (সিপিআই-এম) নেত্রী সুভাষিনী আলি, সাংবাদিক রেবতী লাল এবং লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রূপরেখা ভার্মা এবং অন্যরা শাস্তি শিথিলকরণকে চ্যালেঞ্জ করে পিআইএল দায়ের করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রও দোষীদের অকাল মুক্তির বিরুদ্ধে একটি পিআইএল দায়ের করেছেন।
পুরো ব্যাপারটা কী?
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় যখন তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল তখন বিলকিস বানোর বয়স ছিল ২১ বছর এবং পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দাঙ্গার সময় নিহত পরিবারের সাত সদস্যের মধ্যে তার তিন বছরের মেয়েও ছিল।
এই মামলায় ১১ জন দোষী গত বছরের ১৫ আগস্ট মুক্তি পাওয়ার পর, সমাজকর্মী এবং রাজনীতিবিদরা সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করেন বিলকিস বানো। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট ১১ জন দোষীদের মুক্তি দেওয়া হয়।