স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের দিনই তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী, তাঁকে গণধর্ষণে সাজাপ্রাপ্তরা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে। শঙ্কিত গুজরাত দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত বিলকিস বানো। যা দেখে শেষ পর্যন্ত নীরবতা ভাঙলেন বিলকিস। শীর্ষ আদালতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, 'বিশ্বস্ত সর্বোচ্চ আদালত, আমার বিশ্বাস টলছে। আমাকে বিনা ভয়ে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দাও।'
যে আসামিরা তাঁকে গণধর্ষণ করেছে। তাঁর তিন বছরের মেয়ে-সহ পরিবারের ১৪ সদস্যকে হত্যা করেছে। সেই ১১ জন আজ মুক্ত। যা দেখে বিলকিসের প্রতিক্রিয়া, 'আমি ক্ষতিগ্রস্ত, বঞ্চিত। আমার ক্ষতি পূরণ হয়নি। এদের মুক্তি পেতে দেখে আমার হাত-পা অসাড় হয়ে গিয়েছে। মুখে শব্দ আসছে না। তাই শীর্ষ আদালতের কাছে আর্জি যে আমাকে ভয় ছাড়া এবং শান্তিতে বেঁচে থাকার অধিকার ফিরিয়ে দিক।'
তাঁর আইনজীবী শোভা গুপ্তার প্রকাশ করা বিবৃতিতে বিলকিস বলেন, 'আজ আমি কেবল এটাই বলতে চাই যে কীভাবে কোনও মহিলার জন্য বিচার এভাবে শেষ হতে পারে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওপর আস্থা রেখেছি। আমি ব্যবস্থার ওপর আস্থা রেখেছিলাম। ধীরে ধীরে হলেও আমার জীবনের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম। কিন্তু, এই আসামিদের মুক্তি আমার জীবন থেকে শান্তি কেড়ে নিয়েছে। ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে।'
দাহোদের সিংভাদের গ্রামের বাড়ি বিলকিস আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। সেই গুজরাত দাঙ্গার সময়ই। আর সেখানে ফেরার সাহস পাননি। সেই বাড়ি এখন এক পোশাকের দোকানের মালিককে লিজ দেওয়া হয়েছে। তাঁর একসময়ের প্রতিবেশীরাও ১১ আসামির মুক্তির পর এখন নীরব। দোষীরা ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই গোটা গ্রামে যেন একটা তীব্র নীরবতা নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন- রোহিঙ্গাদের নিয়ে কেন দু’রকম কথা বলছে কেন্দ্র, স্পষ্ট করুক অবস্থান, তোপ সিসোদিয়ার
যারা তাঁকে ধর্ষণ করেছিল। তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুন করেছিল, তারাও একসময় তার প্রতিবেশীই ছিল। যেমন রাধেশ্যাম শাহ (৪৭)। বিলকিস যে বাড়িতে স্বামী ইয়াকুব রসুলের সঙ্গে থাকত, সেই বাড়ি থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে থাকে রাধেশ্যাম। এলাকায় তার পরিচিতি ছিল 'লালা উকিল' নামে। সুপ্রিম কোর্টে যে আইনজীবীরা বিলকিসের আসামিদের মুক্তি চেয়ে আবেদন করেছিল, রাধেশ্যাম ওরফে লালা তাদেরই একজন। সেই আবেদন মেনেই সুপ্রিম কোর্ট বিলকিসের আসামিদের মুক্তির আবেদন বিবেচনা করতে গুজরাত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে।
Read full story in English