Advertisment

নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর হাতের পুতুল বানানোর চেষ্টা, ক্ষমতা খর্বের মারাত্মক প্রবণতা

নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
CEC role, CEC status, Election commissioner status, Election Commission, Election Commission of India, EC to status of Cabinet Secy ,Bill to pick poll panel, Election Commission, CEC salary, Chief Election Commissioner, Parliament special session, indian express

নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এই অধিবেশনে পেশ করা বিলগুলির তালিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। যেখানে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিলও রয়েছে।

Advertisment

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সংসদের বিশেষ অধিবেশনে পেশ করা চারটি বিলের তালিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিলও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাডভোকেট বিল, প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ পিরিওডিকাল বিল এবং পোস্ট অফিস বিল এই অধিবেশনে উত্থাপন করা হবে।

বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন মন্ত্রী। এই প্যানেলের সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা না থাকলে, হাউসের বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতাকে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিল এর আগে রাজ্যসভায় পেশ করা প্রসঙ্গে আম আদমি পার্টি মোদীকে দুষে বলেছে যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান বিচারপতির প্রতিও কোন আস্থা নেই। অন্যদিকে বিরোধী ‘ইণ্ডিয়া’ জোট বলেছে- ‘এই বিল পেশ সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা’।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ও নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ সংক্রান্ত বিল উত্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে। এই বিল এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নির্বাচনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ‘স্বতন্ত্র নির্বাচন বোর্ড’ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।

আপ বলেছে, যে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার উদ্দেশ্যে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে সিইসি এবং ইসিকে একটি স্বাধীন নির্বাচন বোর্ডের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং ভারতের প্রধান বিচারপতিকে (সিজেআই) এই বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিলটি এনে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে একেবারে ‘উল্টে’ দিয়েছে।

বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত একজন মন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে আম আদমি পার্টির সিনিয়র নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘দেশের মন্ত্রিসভা ও প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রধান বিচারপতির ওপর প্রথমবারের মতো এত বড় অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে এটা ‘কালো হরফে’ লেখা থাকবে। একইভাবে, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে দিল্লি সরকারের হাতেই পরিষেবা সম্পর্কিত ক্ষমতা থাকবে, কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার তাও বাতিল করে দিয়েছে’।

ভরদ্বাজ আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার একটি অধ্যাদেশ এনে দিল্লি পরিষেবা সংক্রান্ত সুপ্রিম নির্দেশ বাতিল করেছিল। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী ফের সুপ্রিম কোর্টের প্রতি তাঁর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির একটি প্যানেলের সুপারিশ করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তও বাতিল করা হয়েছে। প্রবীণ এএপি নেতা ভরদ্বাজ বলেছেন যে ‘আজ দেশের সংসদের দুর্ভাগ্য যে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করেন না, যে প্রতিষ্ঠানকে সারা দেশ সম্মানের চোখে দেখে’।

সুপ্রিম কোর্ট ২০২৩ সালের মার্চে এক আদেশে বলেছিল যে প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং বিরোধী দলের নেতার পরামর্শে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ মেনে সিইসি নিয়োগ করা উচিত। কেজরিওয়াল বলেছেন প্রধানমন্ত্রী দেশের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকেও মানেন না। তাঁর বার্তাই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের যে আদেশই তিনি পছন্দ করেন না, তিনি সংসদে আইন এনে তা বাতিল করতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী যদি প্রকাশ্যে সুপ্রিম কোর্টের কথা না মানেন, তাহলে সেটা দেশের পক্ষে ‘বিপজ্জনক’। তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উল্টে দিয়ে মোদীজি এমন একটি কমিটি করেছেন, যেটি তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার করতে পারবে। এতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই থাকবে’।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে.সি. ভেনুগোপাল মোদীকে নিশানা করে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর হাতের পুতুল বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন মোদী সরকার’। তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে এই বিল ২৪ -এর লোকসভা নির্বাচনে কারচুপির একটি স্পষ্ট পদক্ষেপ।বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র পান্ডে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি অবসর নিতে চলেছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন ঘোষণার কয়েকদিন আগেই তিনি অবসর নেবেন। বিলটি পাস হলে সরকার নিজেদের মতো করে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করতে পারবেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার ওই বিতর্কিত বিল পেশের কথা বুধবার লোকসভার আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে প্রশ্নে সোচ্চার বিরোধীরা। প্রস্তাবিত বিল পাশ হলে তা ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হতে পারে বলে অভিযোগ।

১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এর আগে একটি বিল নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। সরকার আলোচনা এবং পাস করার জন্য যে বিষয়গুলি বেছে নিয়েছে তার মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (নিযুক্তি, চাকরির শর্তাবলী এবং কার্যকালের মেয়াদ) বিল 2023। চলতি বছরের ১০ আগস্ট রাজ্যসভায় এটি পেশ করা হয়। বিলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও দুই নির্বাচন কমিশনারের বেতন, ভাতা ও চাকরির শর্ত সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে মুখ্য নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সমান বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান।

সরকার যে সংশোধনী আনতে চলেছে করছে তাতে মুখ্য নির্বাচন কমিশন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মতো একই সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে মিশে নির্বাচন কমিশনারদের হাত-পা বাঁধা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

সূত্রের খবর, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমান বিবেচিত হওয়ার অর্থ হল আপনার মর্যাদা কেন্দ্রীয় সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর চেয়ে কম হবে। এমন অবস্থায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার যখন নির্বাচনের সময় বিধি লঙ্ঘনের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাবেন সেক্ষেত্রে কোথাও অধিকারের প্রশ্ন সামনে আসতে পারে।

এখন পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী, বেতন ও চাকরির শর্তে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সমান ক্ষমতা ও পদমর্যাদা পান। এখন তা পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। সূত্রের খবর বর্তমানে, নির্বাচন কমিশনার যখন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে বৈঠকের জন্য ডাকেন, বা কোন আদেশ লঙ্ঘনের ব্যাখ্যা দিতে বলেন, তখন তার আদেশটি এমনভাবে বিবেচনা করা হয় যেন সেই আদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির আদেশের সমান। এখন নয়া বিধি কার্যকর করা হলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সমান করা হলে তা তার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার সামিল।

সরকারের এই সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনাররাও। প্রাক্তন সিইসি এসওয়াই কুরেশি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, “বিশ্বের অর্ধেক দেশেই নির্বাচন কমিশনারের পদ প্রধানবিচারপতির সমান। গত ১০ বছরে ১০৮টি দেশ তাদের নির্বাচন কমিশনার পাঠিয়েছে আমাদের কাছ থেকে শেখার জন্য। আমরা সেই কৃতিত্ব অর্জন করছি। এখন তা অপসারণের পালা'।

election commission
Advertisment