বৃহস্পতিবার বঙ্গ ভোটে ১৬০টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এই বেলায় দলের নিজস্ব কোনও উল্লেখযোগ্য মুখকে তুলে আনতে পারেনি গেরুয়া শিবির। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভরসা সেই তারকা প্রার্থী কিংবা তৃণমূলত্যাগী। এদের মধ্যে কেউ বলেছিলেন, 'আর ভোটে লড়তে চাই না', কেউ বলেছিলেন, 'দলে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে', কারও আবার মন্তব্য ছিল, 'মানুষের জন্য কাজ করতে চাই'। আদতে তৃণমূল ছেড়ে সকলেরই গন্তব্য ছিল পদ্ম শিবির। আর সেই তৃণমূলত্যাগীদেরই ফের প্রার্থী তালিকায় বড়ভাবে জায়গা দিলেন অমিত শাহরা। আর এতেই ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে এবার কি হেস্টিংস দফতরে আছড়ে পড়বে বিক্ষোভ? জেলায় জেলায় শুরু হবে কর্মী-সমর্থকদের প্রতিবাদ আন্দোলন। যদিও বিজেপি এবার একসঙ্গে ১৬০ জনের তালিকা তৈরি করেছে অন্য কারণে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছে, তালিকা দেখে যা বিক্ষোভ-কোন্দল প্রকাশ্যে আসার এসে যাক। ভোটের সময়ে ঐক্যবদ্ধ বার্তাটুকু যাতে দেওয়া যায়।
যদিও সন্ধ্যার মধ্যেই কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষোভ শুরুও হয়ে গিয়েছে। মালদায় হরিশ্চন্দ্রপুরে মতিউর রহমানকে প্রার্থী করায় পার্টি অফিস ভাঙচুর। জলপাইগুড়ি সদরে সৌজিত সিনহাকে প্রার্থী করায় পার্টি অফিস ভাঙচুর। জগদ্দল অরিন্দম ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করার প্রতিবাদে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে বিক্ষোভ। দুর্গাপুর পূর্বে দীপ্তাংশু চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণার পরেই বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ। জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ পাণ্ডবেশ্বরে। পাসাপাশি প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরেই বিজেপির অন্দরে ‘বিদ্রোহ’। টিকিট না পেয়ে বিজেপির সব পদে সৌরভ শিকদারের ইস্তফা।বিজেপির যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক পদে ইস্তফা।আসানসোলের পর্যবেক্ষক পদেও সৌরভ শিকদারের ইস্তফা।
এদিকে, দীর্ঘ কুড়ি বছর পর ফের মুকুল রায়কে ভোটে ময়দানে নামাচ্ছে বিজেপি। ২০০১ সালে জগদ্দল থেকে লড়ার পর আর ভোটে দাঁড়াননি মুকুল। সূত্রের খবর, বিজেপিতে গিয়েও তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর কোনও ইচ্ছা ছিল না। বরং এবারের ভোটে মুকুল চাইছিলেন, ছেলে শুভ্রাংশুকে নিজের কেন্দ্র বীজপুর থেকে প্রার্থী করতে। মুকুলের সেই আবদার রাখলেও তাঁকে 'আত্মত্যাগ' করতে দিল না বিজেপি। মুকুলকে প্রার্থী করা হল কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে।
আর মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যাওয়া প্রায় সমস্ত নেতাকেই প্রার্থী তালিকায় জায়গা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিধাননগর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে সব্যসাচী দত্তকে, খড়দা থেকে শীলভদ্র দত্তকে, শুভ্রাংশু রায় প্রত্যাশা মতোই পেয়েছেন বীজপুর আসন, ভাটপাড়া থেকে লড়বেন অর্জুন সিংয়ের ছেলে পবন সিং, টিকিট পেয়েছেন গৌরীশঙ্কর দত্তও।
এর আগে তৃতীয় ও চতুর্থ দফার জন্য আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং। তখনও দেখা যায়, তৃণমূল বিধায়ক হিসেবে রাজীবের জেতা ডোমজুড়, সিঙ্গুরে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, উত্তরপাড়ায় প্রবীর ঘোষালকে ফের তাঁদের কেন্দ্রেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। বঙ্গ রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, রাজীব কিংবা প্রবীরকে যেভাবে চাটার্ড ফ্লাইটে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিইয়েছিলেন অমিত শাহ, তাতে তাঁদের প্রার্থী হওয়ার একপ্রকার পাকা ছিলই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য হালে বিজেপিতে যোগ দিলেও তাঁকেও প্রার্থী করেছে দল। আর এরপরই প্রায় গোটা রাজ্যজুড়েই বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে পথে নেমেছেন দলীয় কর্মীরাই। কিন্তু নবান্ন দখলে মরিয়া বিজেপি এখন শেষ ঝুঁকি নিয়েই প্রার্থী ঘোষণা করছে, আর তাতেও সেই তৃণমূল ত্যাগীদেরই জায়গা করে দিতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই শাসক দল তৃণমূল এ নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'বিজেপি বসে আছে, কবে কে তৃণমূল ছাড়বেন, আর ওরা প্রার্থী করবে।' যদিও বিজেপির যুক্তি, 'যাঁরা যোগ্য, তাঁদেরই প্রার্থী করা হচ্ছে।' তাতে অবশ্য বিতর্ক থেমে থাকছে না।
অপরদিকে, ফের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে অস্বস্তিতে বিজেপি৷ চৌরঙ্গী কেন্দ্রে যাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, সেই শিখা মিত্র জানিয়ে দিলেন তিনি বিজেপি-তে যোগই দেননি৷ ফলে প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নও ওঠে না৷ শিখা মিত্র প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের স্ত্রী৷ তাঁর নাম প্রার্থী তালিকায় দেখে চমকে গিয়েছিলেন অনেকেই৷ যদিও চৌরঙ্গী কেন্দ্রেরই প্রাক্তন বিধায়ক শিখা মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে যে খবর ছড়িয়েছে তা 'ভুয়ো' এবং 'মিথ্য়ে'৷
এ দিন দিল্লির বিজেপি সদর দফতর থেকে যে তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে, তাতেই ছিল শিখা মিত্রের নাম৷ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই শিখা মিত্র জানিয়ে দেন, 'এই খবরের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই৷ আমি বিজেপি-তে যোগ দিইনি৷ প্রার্থীও হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না৷ যে খবর প্রচারিত হচ্ছে তা ভুয়ো, মিথ্যে কথা৷' শিখাদেবী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নাম ঘোষণার আগে তাঁর কোনও সম্মতিই নেননি বিজেপি নেতারা৷