Advertisment

বিজেপি নেতার হুমকির পরদিনই দিল্লি হিংসা!

সোমবার হিংসা চরম আকার ধারণ করে। কিন্তু, হঠাৎ কী এমন হল যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের দিনই রক্তাক্ত হল রাজধানী?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সিএএ পন্থী ও বিরোধী সংঘর্ষে দিল্লিতে ইতিমধ্যেই পুলিশকর্মী সহ নিহত ৫ জন।

জ্বলছে দিল্লি। সিএএ পন্থী ও বিরোধী সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই পুলিশকর্মী সহ নিহত ৫ জন। রবিবার রাত থেকে পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ এলাকা থমথমে ছিল। রবিবারই সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছিলেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। বলেছিলেন, বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র টুইট করে বলেছিলেন, যতক্ষণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে থাকবেন, ততক্ষণ তাঁরা অশান্তি করবেন না। কিন্তু, তারপরই সোমবার হিংসা চরম আকার ধারণ করে। কিন্তু, হঠাৎ কী এমন হল যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের দিনই রক্তাক্ত হল রাজধানী?

Advertisment

বেলা দু’টো নাগাদ নাগরিকত্ব আইনের সমর্থক একটি মিছিল জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের দিকে যেতে চেষ্টা করে। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী একটি মিছিল জাফরাবাদ থেকে যেতে চেষ্টা করে মৌজপুর চৌকের দিকে। দু’টি জায়গার মধ্যে দূরত্ব এক কিলোমিটার। দু’টি মিছিল মুখোমুখি এসে পড়লে অশান্তি হবে আঁচ করে পুলিশ মাঝপথে তাদের থামিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন হওয়ার আগেই দু’টি মিছিলের মধ্যে শুরু হয় পাথর ছোঁড়াছুড়ি। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। হুড়োহুড়িতে কয়েকজন পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একটি অটোয় আগুন লাগানো হয়। কারা আগুন লাগিয়েছিল, এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে, কোন তরফে পাথর প্রথম ছোড়া হয় তা নিশ্চিৎ নয়। দুই গোষ্ঠীই একে অপরকে দুষছে। পুলিশকে লক্ষ্য করেও ধেয়ে আসে পাথর। তবে, দিল্লি পুলিশের কোনও আধিকারিকই এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।

তাদের নিশানা করা হয়েছে বলে দাবি করেন মৌজপুরার সংখ্যালঘু মুসলমান বাসিন্দারা। স্থানীয় একটি পরিবারের তরফে বলা হয়, 'এখানে সব ধর্মের মানুষই বসবাস করেন। হঠাৎ দেখছি আমাদের হিন্দু প্রতিবেশীরাই পাথর ছুড়ছে। আটো থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ওরা পাথর জোগার করছে।'

আরও পড়ুন: সিএএপন্থী-বিরোধী সংঘর্ষে দিল্লিতে মৃত বেড়ে ৫, পরিকল্পিত হিংসার অভিযোগ বিজেপির

মৌজপুর মন্দিরের কাছে এক মহিলার দাবি, 'সকাল ১০টা নাগাদ হনুমান চল্লিশা পাঠ করার সময়ই মুসলমান যুবকরা এসে পাথর ছোড়ে।' এখানে অনেক মহিলাই তখন সিএএ-এর পক্ষে লেখা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রস্তুত ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে। পায়ে গুলি লেগে জখম বছর ২৫-এর রোহিত কুমাল শুল্কা বলেন, 'মৌজপুর চকের কাছে ছিলাম। সেখানে হনুমান চল্লিশা পাঠ চলছিল। হঠাই দেখি তাদের লক্ষ্য করে পাথর ধেয়ে আসছে। ওদের মধ্য়ে একজন আমাকে নিশানা করে ও গুলি ছোড়ে।'

publive-image

বেলা যত বেড়েছে হিংসার আকার ততই তীব্র হয়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখে স্থানীয় স্তুলও দুপুর দেড়টা নাগাদ ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। তারপরই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গাড়ি। একদিক থেকে উঠছে জয় শ্রীরাম ধ্বনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিশানা করা হয়। এমনকী পেট্রল বোমা পর্যন্ত মারা হয়। তবে, যারা হিংসায় মদত দিয়েছে তাদের বেশিরবাগেরই মাথায় ছিল হেলমেট।

বিকেলে দিল্লির এই এলাকায় আগুন জ্বলতে থাকে। হিংসার কারণে আগুন নেভাতে যেতে পারেনি দমকল। দাবি করলেন দমকলের ডিএফএস অতুল গর্গ। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ পুলিশ কাঁদানে দ্যাসের সেল ফাটায়। পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ তা আঁচ করা যায় হিন্দু যুব বাহিনীর সদস্য পুষ্পেন্দ্র মিশ্রর কথাতেইষ বললেন, 'গতকাল পর্যন্ত আমাদের কাছে অস্ত্র ছিল না। তবে, আত্মরক্ষার জন্য সোমবার থেকে প্রত্যেকের ঘরেই লাঠি মজুত রয়েছে।'

পুলিশের সামনেই তখন লুঠপাঠ চলছে। পানের দোকান ভেঙে সেখানকার সব লুঠ করছে একদল। দাঁড়িয়য়ে দেখছে পুলিশ। দোকানিরাও ভাত। কপাল চাপড়ানো ছাড়া তাঁদের অন্য উপায় নেই। এর মাঝেই খবর আসে দিল্লি পুলিশের ডিসিপি অমিত শর্মা মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর জখম হয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ কর্মীদের ধরে মারধর করা হচ্ছে।

রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অশান্তির জেরে জাফরাবাদ অঞ্চলের বহু মুসলিম পরিবার ঘরে তালা ঝুলিয়ে মহল্লা ছেড়েছেন। জাফরাবাদ, মৌজপুর, বাবরপুর, সিলমপুরের অনেকে বাড়ির সামনে গেরুয়া পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছেন, যাতে হামলা না হয়। মৌজপুরে এক পুলিশ-কর্মীর সামনেই দেশি পিস্তল উঁচিয়ে তেড়ে আসে লাল টি-শার্ট এক যুবক। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা পুলিশ-কর্মীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশকে হটাতে প্রথমে আকাশে, তার পরে রাস্তার ধারের ভিড় লক্ষ্য করে পরপর গুলি ছোড়ে সে।

বেলা সাড়ে ৪ টায় ভজনপুরে কুর্তা-পাজামা পরা দাড়িওয়ালা একজনকে ঘিরে ফেলে ক্রিকেট স্টাম্প ও লাঠি হাতে মারধর করতে দেখা যায়। রাত পর্যন্ত তাঁর আর কৌঁজ মেলেনি। রাতের দিকে মৌজপুরা মন্দির থেকে ঘোষণা হয় যে, 'আমাদের গোষ্ঠীকে বাঁচাতে ও আত্ম সম্মানেন বজায় রাখতে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে।' একর কিছু পরেই ফের পাথর ছোড়া শুরু হয়। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি দোকান।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Violence delhi caa
Advertisment