ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ কিরোরি লাল মিনার অভিযোগ, ২ এপ্রিল নব সম্বত্সর বা হিন্দু নববর্ষের পর থেকেই ঘরছাড়া করৌলির ১৯৫ জন হিন্দু। ওই দিন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে হিন্দু নববর্ষ উপলক্ষে বাইক মিছিল করেছিল সংঘ পরিবার। তখনই স্থানীয় বাসিন্দারা মিছিলের ওপর পাথর ছোড়েন বলে অভিযোগ। পালটা মিছিলের লোকজন ধেয়ে এলে সংঘর্ষ ছড়ায়। বহু ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে রাজস্থান পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট জানিয়েছেন, ধর্মীয় মেরুকরণ এড়িয়ে চলার জন্য জনসাধারণের কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আবেদন জানানো উচিত। তবে, বিজেপি নেতৃত্ব স্থানীয় হিন্দু জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়েই বেশি চিন্তিত। স্থানীয় সাংসদ কিরোরি লাল মিনা করৌলির জেলাশাসকের ভবনের সামনে ঘরছাড়া হিন্দুদের ফেরানোর দাবিতে ধরনায় বসেছেন। একইসঙ্গে তিনি দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। নিরীহদের যাতে অভিযুক্ত সাজিয়ে হেনস্তা না-করা হয়, সেই দাবিও তিনি করেছেন।
যে ১৯৫ জন হিন্দু ঘরছাড়া বলে মিনার দাবি, তাঁদের নামের তালিকা-সহ একটি চিঠিও তিনি মুখ্যমন্ত্রী গেহলটের কাছে জমা দিয়েছেন। তাতে ঘরছাড়া ব্যক্তিদের বাবার নাম আছে। কিন্তু, ঠিকানা দেওয়া নেই। শুধু চিঠিতে জানিয়েছেন, ওই ঘরছাড়া লোকজন মুসলিম অধ্যুষিত ধোলিখড় এলাকার বাসিন্দা। তারা প্রত্যেকেই দলিত জাতভ, খটিক, কাহার, ধোবি এবং কুমহার সম্প্রদায়ের। চিঠিতে কিরোরি লাল মিনা অভিযোগ করেছেন, এলাকায় এখনও ভয়ের পরিবেশ আছে। এমন ঘরছাড়া হওয়ার ঘটনা রুখতেও তিনি চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
চিঠিতে মিনার অভিযোগ, সংঘর্ষের পর শতাধিক ব্যক্তিকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারই করা হয়নি। ঠিক কী হয়েছিল ২ এপ্রিল? এই ব্যাপারে করৌলি থানার পুলিশ আধিকারিক রামেশ্বর দয়াল মিনা জানিয়েছেন, বিকেল ৪টার সময় হিন্দু নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। ২০০-র বেশি বাইকে ৫০০ জন লোক ছিলেন। তাঁরা জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছিলেন। হাতে ছিল গেরুয়া পতাকা। সঙ্গে ডিজেতে গান বাজছিল। মিছিল মণিহরণ মসজিদের কাছে পৌঁছলে, স্থানীয় বাসিন্দারা ছাদ থেকে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ওপর পাথর ছোড়া শুরু করে। পাথরের আঘাতে বাইকে থাকা লোকজন ও মিছিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা আহত হন।
স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের অভিযোগ, ডিজেতে প্ররোচনামূলক গান বাজানো হচ্ছিল। এফআইআরে অবশ্য অভিযোগ, মিছিলে পাথরবৃষ্টি রীতিমতো পূর্ব-পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়ায়। ৩৬টিরও বেশি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আহত হন অন্তত ২৪ জন। মিছিলের সঙ্গে থাকা পুলিশকর্মীরা এই ছড়িয়ে পড়া হিংসা সামলাতে পারেননি। তাঁদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন পাথরবৃষ্টিতে আহত হয়েছেন।
ঘটনায় রাজস্থান পুলিশের ডিজি এম এল লাথের জানিয়েছেন, এফআইআরের ভিত্তিতে ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখে ৪৪ জন অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও এফআইআরে ৩৭ জনের নাম ছিল। মোট ১০টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে একটি করেছেন করৌলি থানার পুলিশকর্তা।
Read story in English