Advertisment

বয়েজ লকার রুম মামলা: পুলিশের জালে দিল্লির অভিজাত স্কুলের ১৫ বছরের ছাত্র

দক্ষিণ দিল্লির কিছু নামী স্কুলের ছাত্রদের একটি গোপন ইন্সটাগ্রাম গ্রুপে মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল ও যৌন হিংসামূলক আলোচনা, এবং ছবির আদানপ্রদান হতো বলে খবর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
bois locker room

দক্ষিণ দিল্লির কিছু নামী স্কুলের ছাত্রদের একটি গোপন ইন্সটাগ্রাম গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করল দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল। এই গ্রুপে মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল আলোচনা, এবং ছবির আদানপ্রদান হতো বলে খবর। এই ঘটনায় ১৫ বছরের এক কিশোরকে আটকও করেছে পুলিশ। তদন্ত চলছে।

Advertisment

'Bois Locker Room' (বয়েজ লকার রুম) নামক এই গ্রুপের কিছু তথাকথিত চ্যাটের স্ক্রিনশট রবিবার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামে। সেগুলির ভিত্তিতে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এফআইআর দায়ের করে সাইবার সেল। এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকের কথায়, "সোমবার আমরা জানতে পারি যে একটি নামী বেসরকারি স্কুলের কর্তৃপক্ষ সাকেত থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।"

ওই আধিকারিক আরও জানান, "তাঁদের অভিযোগে স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রযুক্তি প্রহরার মাধ্যমে পুলিশ ওই ১৫ বছরের ছেলেটির নম্বর হাতে পায়, যে গ্রুপে একটি ছবি শেয়ার করেছিল বলে বলা হয়েছে। তার ফোন সুইচড অফ ছিল। ঠিকানা খুঁজে বের করে সোমবার সন্ধ্যাবেলা তাকে আটক করা হয়।"

এ পর্যন্ত পুলিশ যা জানতে পেরেছে, তাতে দক্ষিণ দিল্লির কিছু নামী স্কুলের ছাত্ররা ইন্সটাগ্রামে এই গ্রুপটি তৈরি করে মার্চ মাসের শেষের দিকে, এবং নিজেদের বন্ধুদের সেখানে যুক্ত করতে থাকে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "গ্রুপের কিছু সদস্য কলেজেও পড়ে। কয়েকটি ছেলে এরপর কিছু স্কুলছাত্রীর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি নিয়ে গ্রুপে শেয়ার করে, এবং তাদের সম্বন্ধে স্পষ্টতই যৌন মন্তব্য করে।" এই মন্তব্যের মধ্যে সম্ভাব্য যৌন হিংসার হুমকিও ছিল বলে জানিয়েছেন এই আধিকারিক।

ডিসি (সাইবার সেল) অন্যেশ রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "আমরা ঘটনাটির কথা জানতে পেরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৫ (জালিয়াতি), ৪৭১ (নকল নথি বা ইলেকট্রনিক দলিলকে আসল বলে চালানোর চেষ্টা), ৪৬৯ (জালিয়াতি করে মানহানি করার চেষ্টা), ৫০৯ (কথা বা কাজের দ্বারা কোনও মহিলার শ্লীলতাহানি) ধারা; এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ (ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অশ্লীল উপাদান প্রকাশ বা প্রেরণ করা), এবং ৬৭ 'ক' (যৌন কার্যকলাপ সংক্রান্ত উপাদান ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশ বা প্রেরণ করা) ধারার আওতায় এফআইআর দায়ের করি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমস্ত টেকনিক্যাল প্রমাণ সংগ্রহ করছি।"

এখন পর্যন্ত দক্ষিণ দিল্লির চারটি, এবং নয়ডার একটি বেসরকারি স্কুলের নাম এই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এগুলির মধ্যে চারটি স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। একজন কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন, দুজন কল বা মেসেজের কোনও উত্তর দেন নি। দিল্লির একটি স্কুলের অধ্যক্ষ বলেন, "যা মনে হচ্ছে, তাতে আমাদের স্কুলের কিছু ছাত্র এই গ্রুপের অংশ ছিল। আমরা যতক্ষণে জানতে পারি, ততক্ষণে পুলিশের কাছে অভিযোগ চলে গেছে। আমাদের কাছে এটা স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো খবর, কারণ আমাদের স্কুলের যা পরিবেশ, তাতে নারীপুরুষ, সম্মান, সাইবার ক্রাইম, ইত্যাদি বিষয়ে সবসময়ই আলোচনায় উৎসাহ দেওয়া হয়। অজস্র ওয়ার্কশপও করেছি আমরা। প্রত্যেক স্কুলই চেষ্টা করে এমন একটা আবহ গড়ে তুলতে যেখানে খোলাখুলি অথচ নিরাপদভাবে আলোচনা করা যায়। আমি এও মনে করি যে এসব ক্ষেত্রে সন্তানের জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকা খুবই জরুরি। এই ভূমিকা বাবা-মায়ের পালন করা উচিত, স্রেফ শাসন করলে বা বাচ্চাকে নিজের মতো ছেড়ে দিলেই হবে না। স্মার্টফোন যথেচ্ছ ব্যবহার করতে দিচ্ছেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্বজ্ঞান, সম্মান, ইতাদি ব্যাপারে আলোচনা হয় না।"

ঘটনা সম্পর্কে এক প্রেস বিবৃতিতে ফেসবুকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, "আমরা কখনোই যৌন হিংসামূলক আচরণ অথবা কাউকে শোষণ করার প্রচেষ্টার অনুমোদন করি না, বিশেষ করে মহিলা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে। অনুমতি বিনা অন্তরঙ্গ ছবি শেয়ার করা নিয়ে আমাদের কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এমনকি এই ধরনের ছবি শেয়ার করার হুমকি নিয়েও, এবং এমরা এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিচার করছি।"

তাদের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করেছে বলে জানিয়েছে ইন্সটাগ্রামের এক সূত্র।

মুম্বইয়ের সাইবার ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা শুভম সিং, যিনি নিয়মিত মুম্বই পুলিশের সহায়তা করে থাকেন, জানিয়েছেন যে ঘটনার পর তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন বেশ কিছু ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী, যাঁরা ওই গ্রুপের স্ক্রিনশট দেখে স্তম্ভিত। "আমরা ওই গ্রুপের সদস্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি," বলেন তিনি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment