আরও কাছাকাছি ভারত-ব্রিটেন। বরিস জনসনের সফরে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে 'বিশেষ বন্ধু' হিসেবে অভিহিত করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জনসন এদিন জানিয়েছেন, চলতি ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে। শুক্রবার দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে বৈঠক শেষে জনসন বলেন, ''পরের সপ্তাহে আলোচনার পরবর্তী ধাপ শুরু হবে। এবছরের দিওয়ালির আগেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শেষ করতে মধ্যস্থতাকারীদের বলছি। এই দশকের শেষ নাগাদ ভারতে আমাদের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে।''
বৃহস্পতিবার গুজরাত দিয়ে ভারত সফর শুরু করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। শুক্রবার সকালে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয় ব্রিটিশ প্রধানমমন্ত্রীকে। এরপর ভারত-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু হয়। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বসেন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশের কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন জনসন ও মোদী। এছাড়াও কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে।
জনসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, এবছরের শেষ নাগাদ চুক্তির ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। উভয় দেশই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং এর সুফলও মিলছে বলে জানান মোদী। অন্যদিকে, বরিস জনসন এদিন জানান, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে এই অংশীদারিত্ব তাঁদের আমলের বন্ধুত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। এদিন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে সরাসরি বক্তব্য এড়িয়ে জনসন বলেন, ''স্বৈরাচারী শক্তির হুমকি বেড়েছে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকেই বিরোধিতায় ভারত। এদিন আবারও ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এদিন বলেন, ''আমরা সংঘাত বন্ধের আবেদন জানিয়েছি। সমস্যা মেটাতে আলোচনা ও কূটনৈতিক পথেই হাঁটার ওপরে জোর দিয়েছি। আমরা সব দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার গুরুত্ব আবারও ব্যক্ত করছি।''
এদিকে, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও গভীর করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ''ব্রিটেন ভারতীয় পরিকল্পনায় তৈরি ফাইটার জেটের জন্য সাহায্য করবে। এছাড়াও ভারত মহাসাগরে থাকা হুমকির জবাব ও শনাক্তকরণে নতুন প্রযুক্তির জন্য ভারতের সব ধরনের প্রয়োজনকে সমর্থনের চেষ্টা করবে ব্রিটেন। স্থল, সমুদ্র, বায়ু, মহাকাশ এবং সাইবার দুনিয়া জুড়ে নতুন হুমকির মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে আমরা সম্মত হয়েছি। যার মধ্যে নতুন ফাইটার জেট এবং সামুদ্রিক প্রযুক্তিতে অংশীদারিত্বও রয়েছে। যাতে সমুদ্র-ক্ষেত্রের হুমকিও শনাক্ত করা যায় এবং তার জবাব দেওয়া যায়।''
দুই দেশই প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি উন্নয়ন-সহ একাধিক বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এদিন কেন্দ্রের "আত্মনির্ভর ভারত" ভাবনারও প্রশংসা করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আরও পড়ুন- ‘রাশিয়ার আগ্রাসন সম্পূর্ণ ভুল-দৃঢ়ভাবে জানাক ভারত’, এবার দিল্লিকে কড়া কথা হিলারির
আগামী দিনে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক আর ওমসৃণ হবে বলে আশাবাদী দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, আগামী দশকে ভারতের সঙ্গে বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য লন্ডন নয়াদিল্লিকে একটি ওপেন জেনারেল এক্সপোর্ট লাইসেন্স (OGEL) ইস্যু করবে। এর ফলে আমলাতন্ত্রের বিষয়টি কমবে বলে আশাবাদী ব্রিটেন।
অন্যদিকে, এদিন রাশিয়া ও চিনের ভূমিকারও নাম না করে সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ''বিশ্ব স্বৈরাচারী দেশগুলির ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। যারা গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে চায়, অবাধ ও ন্যায্য বাণিজ্য বন্ধ করতে চায়, সার্বভৌমত্বকে পদদলিত করতে চায়।" তিনি আরও বলেন, ''ভারতের সঙ্গে ব্রিটেনের বোঝাপড়া এই ঝোড়ো সমুদ্রে একটি আলোককণার মতো। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে শক্তি, সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের উভয় দেশের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাচ্ছি।"
Read full story in English