বুধবার ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ অবতরণের ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। এপ্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুল বিবৃতি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। চন্দ্রযান-৩ ল্যান্ডার চাঁদে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ব্যানার্জি ভুল করে মহাকাশ্চারী রাকেশ শর্মার বদলে বলিউড অভিনেতা-চলচ্চিত্র নির্মাতা রাকেশ রোশনের নাম উল্লেখ করেন। এরপরই বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের জনগণের পক্ষ থেকে আমি ইসরোকে আমার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কৃতিত্ব বিজ্ঞানীদের দেওয়া উচিত, ক্রেডিট দেশের পাওয়া উচিত। রাকেশ রোশন যখন চাঁদে অবতরণ করেছিলেন, তখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ওখান থেকে ভারত কেমন দেখায় তাকে জিজ্ঞেস করেন।” ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট রাকেশ শর্মা ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের Soyuz T-11 মিশনের অংশ হিসেবে মহাকাশে ভ্রমণকারী প্রথম ভারতীয় হিসাবে ইতিহাস গড়েন। মুখ্যমন্ত্রীর ভুল বক্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানান মেম ভাইরাল হয়েছে।
আপনি কি জানেন আমাদের সেই প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা এখন কোথায় কী অবস্থায় রয়েছেন?
২৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬.০৪ মিনিটে, চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম চন্দ্রপৃষ্ঠে নরম অবতরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে। ইসরো যখন চাঁদে ইতিহাস তৈরি করেছে, তখন এমন সময়ে একজন ব্যক্তির কথা আমাদের মনে রাখা দরকার। এই সেই ব্যক্তি যিনি মহাকাশে ভারতের সাফল্যের জীবন্ত প্রতীক। এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে ভারত থেকে যে ব্যক্তি প্রথম মহাকাশে পৌঁছেছিলেন তিনি কোথায়?
যখনই ভারত এবং মহাকাশ নিয়ে কথা হয়, প্রশ্নাতীতভাবে একটি মুখ সামনে আসে। রাকেশ শর্মা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ভারত থেকে প্রথমবারের মতো মহাকাশে পৌঁছে ইতিহাস তৈরি করেন। রাকেশ শর্মা মহাকাশে ৭ দিন ২১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট কাটিয়েছেন। তিনি ভারতের গৌরবকে এক মাত্রাতীত উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতের মহাকাশ গবেষণা প্রচেষ্টায় তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও, তিনি তার অবদানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খ্যাতি এবং স্বীকৃতি পাননি।
এই বছরের জুলাই মাসে, দেশের প্রথম মহাকাশচারী এবং প্রাক্তন ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট রাকেশ শর্মার একটি ছবি অনলাইনে ভাইরাল হয়েছিল। এর মাধ্যমে জানা গিয়েছে তিনি তামিলনাড়ুতে ‘নির্জন জীবন’ যাপন করছেন। তার সঙ্গে থাকেন তার স্ত্রী মধুও। রাকেশ শর্মা ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছেন। রাকেশ শর্মা ২০২১ সালে বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক কোম্পানি ক্যাডিলা ল্যাবসের নন-এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও, শর্মা গগনযানের জন্য ISRO-এর জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ভারতীয় মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেন্ট অ্যান্টনি'স হাই স্কুল এবং সেন্ট জর্জ'স গ্রামার স্কুলের মতো নামী স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর তিনি হায়দ্রাবাদের নিজাম কলেজ থেকে স্নাতক হন। সামরিক বাহিনীর প্রতি তার আবেগ তাকে পুনের মর্যাদাপূর্ণ ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমিতে (এনডিএ) নিয়ে যায়। এনডিএ প্রশিক্ষণের পর, তিনি ১৯৭০ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে (আইএএফ) যোগ দেন। তিনি ১৯৮৪ বিমানবাহিনীতে স্কোয়াড্রন লিডার হন। তিনি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার ব্যতিক্রমী দক্ষতার পরিচয় দেন।
রাকেশ শর্মা ১৯৮২ সালে সোভিয়েত-ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত হন। তিনি মস্কোর ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারে কঠোর প্রশিক্ষণ নেন। তিনি দুই সোভিয়েত মহাকাশচারীর সঙ্গে Soyuz T-11-এ মহাকাশে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি তার কৃতিত্বের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের মর্যাদাপূর্ণ হিরো খেতাব পেয়েছিলেন। ১৯৮৪ রাকেশ শর্মা প্রথমবারের মতো মহাকাশে যান। ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হওয়া রাকেশ শর্মার জন্য একটি অসাধারণ কৃতিত্ব হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে।
দেশ যখন চাঁদে নিরাপদে চন্দ্রযান-৩ অবতরণের জন্য অপেক্ষা করছিল, রাকেশ শর্মা ইসরোর সাফল্যে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। রাকেশ শর্মা বলেছিলেন যে ISRO কীভাবে কাজ করে তা জানার পরে, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে চন্দ্রযান-৩ চাঁদে নিরাপদ সফট ল্যান্ডিং করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেছিলেন যে গত ৪০ বছরে, সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, ISRO একটি দুর্দান্ত যাত্রা করেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বছরের পর বছর যে কর্মসূচি চালিয়েছি তা বিশ্বকে অবাক করেছে।
উইং কমান্ডার হিসেবে অবসর নেওয়ার পর তিনি ১৯৮৭ সালে চিফ টেস্ট পাইলট হিসেবে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডে (এইচএএল) যোগ দেন। তিনি ২০০১ সালে বিমান চালানো ছেড়ে দেন। এর পর তিনি তামিলনাড়ুর কুনুরে এসে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। এখানে রাকেশ শর্মা গলফ, গার্ডেনিং, যোগব্যায়াম, ভ্রমণের মতো শখ পূরণ করে জীবন কাটাচ্ছেন।