শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union বা EU) থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ। অর্থনৈতিক এই সংগঠন থেকে ব্রেক্সিটের (Brexit বা ব্রিটেনের 'এক্সিট') পক্ষে ২০১৬ সালেই ভোট দেন ব্রিটেনের নাগরিকরা, যদিও ৪৭ বছর ধরে এই সংগঠনের সদস্য ছিল ব্রিটেন।
ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার প্রাক-মুহূর্তে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই ঐতিহাসিক সময়কে নতুন যুগের সূচনা আখ্যা দেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রেক্সিট কার্যকর হয় ব্রিটেনের সময় অনুযায়ী রাত এগারোটায়, যা ভারতীয় সময়ের চেয়ে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পিছিয়ে।
তাঁর ভিডিও বার্তায় সমগ্র ব্রিটেনকে আশা এবং সুযোগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনসন বলেন, "এই সেই মুহূর্ত যখন ভোর আসে, এবং আমাদের মহান রাষ্ট্রীয় মঞ্চে পর্দা সরে গিয়ে এক নতুন অধ্যায় প্রকাশ পায়।" প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "এটি শুধুমাত্র আইনি মুক্তিলাভের ব্যাপার নয়। এটি আমাদের দেশের পুনরুজ্জীবন এবং পরিবর্তনের সমূহ সম্ভাবনার মুহূর্ত। এমন এক নতুন যুগের সূচনা যখন আমরা আর মেনে নেব না যে আপনার বা আপনার পরিবারের জীবনের গতিপ্রকৃতি আপনি দেশের কোন জায়গায় বড় হয়েছেন, তার ওপর নির্ভর করবে।"
এই মুহূর্তেই যে আমূল পরিবর্তন হবে এমন নয়, আজ থেকে শুরু করে এবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্বঘোষিত শর্ত অনুযায়ী চলবে পরিবর্তন প্রক্রিয়া। তবে সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ মুক্তিলাভের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে এই মুহূর্ত থেকেই, যার ফলে সদস্য সংখ্যা এখন দাঁড়াল ২৭টি দেশে।
উভয়পক্ষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক লেনদেনের ওপর জোর দেন জনসন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং নতুন করে শক্তিশালী ব্রিটেনের মধ্যে "বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার নতুন যুগের" সূচনার কথাও বলেন। "সেটা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণই হোক অথবা আমাদের মৎস্য শিল্পের উন্নয়ন...এটিই সঠিক গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ।"
তবে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকাকালীন সংগঠনের বিবর্তনের সমালোচনা করে জনসন বলেন, "ইইউ-এর অনেকগুলি প্রশংসনীয় দিক থাকলেও গত ৫০ বছরে তা এমন এক পথে এগিয়েছে যা এদেশের পক্ষে আর সুবিধাজনক নয়। এবং এই তত্ত্ব আপনাদের ভোটে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।"
ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির নেতা জনসন গত বছর প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেই জানিয়ে দেন, নির্দ্বিধায় ইইউ ছাড়ছে ব্রিটেন। তবে সেদেশে ব্রেক্সিটের সমর্থক এবং বিরোধীদের মধ্যে গভীর বিভেদের কথা উল্লেখ করে জনসন বলেন, "আমরা আজ রাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে দিচ্ছি। অনেকের কাছে এটি এক চরম সম্ভাবনার সময়, তবে অনেকেই গভীর উৎকণ্ঠা সহকারে ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন। আমি এই মনোভাব বুঝি, কিন্তু সরকার হিসেবে আমাদের কর্তব্য, সকলকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলা।"
এই লক্ষ্যেই শনিবার থেকেই ভারত সমেত ১৩টি দেশে চালু হচ্ছে ব্রিটিশ সরকারের 'GREAT Ready to Trade' অভিযান। এর আগে জনসন বারবার ভারতের সঙ্গে "নতুন এবং উন্নত" ব্যবসায়িক সম্পর্কের কথা বলেছেন, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘেরাটোপের বাইরে থাকলে আরও জোরকদমে এগোবে বলে মনে করা হচ্ছে।