উদ্বেগটা সকাল থেকেই ছিল। বিকেল গড়াতেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে ফোন করলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত সচিব। ফোনের ওপার থেকে বললেন, 'দ্য লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন।' যে প্রথাগত বক্তব্যের অর্থ প্রয়াত হয়েছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। আগেই বাকিংহাম প্যালেসের তরফে এই কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রানি ছিলেন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্যালেসে। চিকিৎসকদের পরামর্শে বৃহস্পতিবার সেখানেই চলে যান প্রিন্স চার্লস, প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা। পরে রাজবাড়ির তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানো হয়, 'রানি বিকেলে মারা গিয়েছেন। আগামিকাল তাঁর দেহ লন্ডনে ফেরানো হবে।'
এর আগে বৃহস্পতিবার চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, রানিকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। কিন্তু, এবার অত্যন্ত অবনতি হওয়ায় তাঁরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। রানি এলিজাবেথ ব্রিটেন তো বটেই, বিশ্বে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে রাজত্ব করা শাসক। গত বছর থেকেই তিনি তেমন একটা আর হাঁটাচলা করতে পারছিলেন না।
বাকিংহাম প্যালেস এই ব্যাপারে জানিয়েছে, ‘আজ সকাল তাঁকে ডাক্তাররা দেখেন। তারপরই রানির স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁকে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। বালমোরাল প্রাসাদে রানির দেহ রাখা আছে।’ গত অক্টোবরে রানি এলিজাবেথকে একরাত হাসপাতালে কাটাতে হয়। তারপর থেকেই তাঁর জনসমক্ষে আসা একপ্রকার বন্ধ।
আরও পড়ুন- ‘টোকিও থেকে বাবার চিতাভস্ম দেশে ফেরান’, সব রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ নেতাজি-কন্যা অনিতার
বুধবারই রানির ব্রিটেনের মন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু, রানির শারীরিক কারণে সেই বৈঠক বাতিল হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দেন। কনজারভেটিভ দলের নির্বাচনে জয়ের পর লিজ ট্রাস বালমোরাল প্রাসাদে রানির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। লিজেরও প্রথম নাম এলিজাবেথ। তিনি ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী। রানি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
রাজবাড়ি সূত্রে খবর, ডাক্তাররা আগেই জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে যখন তখন যা কিছু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯৫২ সাল থেকে রানি এলিজাবেথ ব্রিটেন শাসন করেছেন। এবছর তাঁর রাজত্বের ৭০ বছর পূর্তি হয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস রানির মৃত্যুর খবরে শোকপ্রকাশ করেছেন। রাজ পরিবারের তরফেও জারি করা হয় বিবৃতি।
এই ব্যাপারে ট্রাস বলেছেন, ‘আমি এবং গোটা ব্রিটেন এখন রানির মৃত্যুর খবরে শোকার্ত। আমরা রানি ও তাঁর পরিবারের পাশে আছি।’ ভারত-সহ বিশ্বের সব দেশ রানির মৃ্ত্যুর খবরে শোক জ্ঞাপন করেছে।
হাউস অফ কমন্সের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েল পার্লামেন্টে একটি বিতর্কের মধ্যেই রানির শারীরিক অসুস্থতার খবর বৃহস্পতিবার জনপ্রতিনিধিদের দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে রানির আরোগ্য কামনা করে রাজপরিবারকে বার্তাও পাঠিয়েছিলেন তিনি। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার বলেছিলেন, ‘ব্রিটেনের অন্যান্য সকলের সঙ্গে আমিও বাকিংহাম প্যালেসের খবরে গভীরভাবে চিন্তিত। রানির দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’ কিন্তু, শেষপর্যন্ত কোনও শুভকামনাই কাজে দিল না।