সীমান্ত ঘিরে ইন্দো-চিন উত্তেজনা বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা এনডিএ সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন প্রাক্তন কটনীতিকরা। তাঁদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ভারতের উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বেজিংয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করা। নয়াদিল্লিকে চিনা নীতিও নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করেন প্রাক্তন কূটনীতিবিদরা।
প্রাক্তন কূটনীতিবিদ কে সি সিংয়ের কথায়, 'গত অগাস্টে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ দারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করেছিল চিন। ওই পদক্ষেপের ফলে আমাদের তিন প্রতিবেশী ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সতর্ক হওয়ার সেটাই ছিল উপযুক্ত সময়। কিন্তু, প্রথম সেই ইঙ্গিত আমরা বুঝতে ভুল করেছি। এরপর আমেরিকায় হাইডি মোদী অনুষ্ঠান হয়। যার ফলশ্রূতি হিসাবে ভারতে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি। করোনা মহামারীর জন্য ট্রাম্প চিনকে দায়ী করেন। এরপরে লাদাখে নিয়ন্ত্রণরেখা টপকে চিনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে এসেছে। এতে আবাক হওয়ার কি আছে?'
এই পরিস্থিতিকে কার্গিলের থেকেও বাজে বলে মনে করছেন প্রাক্তন কূটনীতিকরা। তাঁদের মতে, পাক সেনা নয়, কার্গিলে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। কিন্তু, গালওয়ানে চিনা সেনারা সমরাস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কারাকোরামের পাশে দউলতবাগ ওল্ডিতে যে নতুন সড়ক ভারত গড়েছে সেই অঞ্চলের দখল চাইছে তারা।
তবে, লাদাখে চিনা আক্রমণকে প্রেসিডেন্ট জিংপিংয়ের সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ বলেই মনে করেন কে সি সিং। তাঁর মতে, 'মহামারীর পর চিনের অভ্যন্তরীণ আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতেই এই আগ্রাসন।' অর্থনৈতিক মন্দা ঘিরেই ভারতের সঙ্গে চিনের বেশিরভাগ চুক্তি হয় হলে উল্লেখ করেন প্রাক্তন এই কূটনীতিক। তিনি জানান, '১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের বিদ্রোহে বেজিংয়ের দেওয়ালে পীঠ ঠেকে গিয়েছিল। অর্থনীতির গতি হ্রাস পেয়েছিল। যার দরুন ১৯৯৩-৯৬ সালের চুক্তি দু'দেশের মধ্যে সম্পন্ন হয়।'
প্রাক্তন কূটনীতিবিদ জি পার্থসারথীর কথায়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সীমান্তে ভারত পরিকাঠামোগত উন্নয়নের যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাও চিন ভালোভাবে দেখেনি। সিয়াচেনের দখল ভারতের হাতে। নিয়ন্ত্ররেখায় সড়ক ও সেতু তৈরির ফলে ওই অংশ দিয়ে ভারত চিনের কার্যকলাপে নজর রাখতে পারবে। ফলে ভারতকে প্রতিহত করতেই আক্রমণের কৌশল নিয়েছে বেজিং।
এছাড়ও, বিশ্বব্যাপী বন্ধুর সংখ্যা বাড়ছে ভারতের। সম্প্রতি ট্রাম্প ভারতকে জি-৭ সম্মেলনেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমন্ত্রণের তালিকায় রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়াও। এদের কারোর সহ্গেই চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। ফলে ভারতের উপর চাপ বাড়তেই সীমান্তে উত্তেজনা জারি রাখতে চাইবে চিন। এমনটাই মনে করেন প্রাক্তন কূটনীতিক সিং। সমস্যার অশু কোনও সমাধান নেই বলেই মনে করছেন তিনি।
সীমান্ত সমস্যা মোকাবিলায় ভারতের একদিকে যেমন আলোচনা জারি রাখা উচিত তেমনই দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিকস্তরেও নিজেদের পক্ষে সহমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। এশিয়াতে বহুদেশে চিনা আগ্রাসনের শিকার। ভারতের উচিত তাদের সকলকে একত্রিত করা। এই পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাক্তন দুই কূটনীতিক। করোনা ইস্যুতেও চিনকে কোণঠাসা করার উদ্যোগ নয়াদিল্লির নেওয়া উচিত বলে মনে করেন জি পার্থসারথী। চিনা বাজারকে দুর্বল করার কথাও বলেছেন তাঁরা।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন