Advertisment

বুলন্দশহর কাণ্ডের ৯ অভিযুক্তের নাম পরিচয়

এফআইআরে যে ২৭ জনের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে ৯ জনের পরিবারের কাছে পৌঁছেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এই ৯ জনই অন্তত দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনো করেছে এবং এদের প্রায় সকলেই পেশায় কৃষক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বুলন্দশহরে দুষ্কৃতী গুলিতে মারা যান পুলিশ অফিসার সুবোধ কুমার (ফাইল ছবি- গজেন্দ্র যাদব)

বুলন্দশহরে পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংয়ের খুনের ঘটনায় এফআইআরে পয়লা নম্বরে যার নাম রয়েছে, সেই যোগেশ রাজ আইনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বিভিন্ন গার্হস্থ্য ঝামেলায় নাক গলানো এবং গবাদি পশু পাচারের খবর শুনলেই সেখানে হানা দেওয়া, এসব করে বেশ নাম-ডাক হয়েছে তার।

Advertisment

বুলন্দশহর পুলিশ বলছে, যোগেশ রাজ স্থানীয় বজরং দল শাখার জেলা সংযোজক। সে এখন ফেরার। পুলিশ এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে, আটক করা হয়েছে আরও বেশ কয়েকজনকে।

এফআইআরে যে ২৭ জনের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে ৯ জনের পরিবারের কাছে পৌঁছেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এই ৯ জনই অন্তত দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনো করেছে এবং এদের প্রায় সকলেই পেশায় কৃষক।

৯ জনের মধ্যে ৭ জনের পরিবার জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। তবে কথা বলার সময়ে সকলেই গরু পাচারের প্রসঙ্গ উঠলেই বেজায় ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে।

অভিযুক্তরা সকলেই সিয়ানার কাছাকাছি তিনটি গ্রামের বাসিন্দা, এবং এদের মধ্যে অধিকাংশই জাঠ। শুধু নয়াবাস গ্রামের বসান্দা যে অভিযুক্ত, সে লোধ রাজপুত সম্প্রদায়ের।

মঙ্গলবার ভোর রাতে এদের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ, সকলেরই অভিযোগ পুলিশ আধিকারিকরা তাদের মারধর করেছে এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।

আরও পড়ুন, পুলিশ হত্যা নিয়ে চুপ যোগী সরকার! গোহত্যার জন্য গ্রেফতার চার

যোগেশ রাজ (২৫), আইনের ছাত্র, বজরঙ্গ দল কর্মী

রাজের বাড়ি গেরুয়া রঙের, ঢোকার মুখেই অখণ্ড ভারতের এক মানচিত্র। তার বোন সীমা জানালেন, যোগেশ ১৬ বছর বয়স থেকেই বজরঙ্গ দলের সঙ্গে রয়েছে। সীমার কথায়, সোমবার যোগেশ রাজ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। তারপর বজরঙ্গ দলের অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে সে ফোন পায়।  ‘‘এরপর ও ওই এলাকায় য়যা., তারপর রাতে বাড়ি ফেরে। আমাকে চিন্তা করতে বারণ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়, কিন্তু তারপর থেকে আর ফেরেনি।’’

কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, সোমবার কোনও পরীক্ষা ছিল না। রাজদের জমি জমা রয়েছে। রয়েছে একাধিক মহিষও। আপাতত ৬ জনের একটি দল ফেরার রাজকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

দেবেন্দর (৫৫), তার ছেলে চমন (২১), কৃষক এবং পুলিশে চাকরি প্রার্থী

মঙ্গলবার এই বাবাছেলেকে গ্রেফতার করে ১৫ জনের একটি দল। দেবেন্দর কৃষক, তাঁর ছেলে ক্লাস টুয়েলভ পাশ করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশে ঢোকার চেষ্টা করছে।

চমনের মা ভুরি বলছেন, ‘‘গত জানুয়ারি মাসে আমার ছেলে পরীক্ষা দিয়েছে। যখন ওইসব হচ্ছিল তখন আমার ছেলে ট্যুইশন পড়তে গিয়েছিল। আমি যদি জানতাম এফআইআরে ওর নাম আছে, তাহলে ওকে পালাতে বলতাম।’’

চারজনের পরিবারে রয়েছে চমনের ১৮ বছর বয়সী বোনও। তাদের তিন বিঘা জমি রয়েছে।  গোহত্যা নিয়ে দেবেন্দরের রাগ থাকলেও তা তিনি প্রকাশ্যে বলতেন না বলে জানিয়েছেন ভুরি দেবী।

রাজ কুমার (৩৬), প্রাক্তন প্রধান

মাত্র দু বছর আগে জনতা রাজ কুমারের বাড়িতে ভিড় জমাত তাঁর পরামর্শ নিতে। পুলিশ জানিয়েছে, রাজকুমারই সেদিন প্রথম দাবি করেছিল যে সে পশুর মৃতদেহ দেখতে পেয়েছে। চিংরুটি গ্রামের প্রাক্তন প্রধানের ৮ ও ১৩ বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। রয়েছে ১০ বিঘা জমি এবং তুতো ভাইয়ের সঙ্গে ভাগজমিও। এসব ছাড়া ৪টি মহিষ ও দুটি গরু থাকা আসা রোজগারও রয়েছে তারা। রাজ কুমার নিজে বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়েছে। তার দুই সন্তান বুলন্দশহরের প্রাইভেট স্কুলে পড়ে। রাজের স্ত্রী বললেন, ‘‘আমার স্বামীর দুর্ভাগ্য যে গরুর মৃতদেহ ওঁরই চোখে পড়েছিল।’’

publive-image দুষ্কৃতীরা জ্বালিয়ে দেয় পুলিশের গাড়ি (ফোটো- গজেন্দ্র যাদব)

জিতেন্দর মালিক (২৪), সেনাকর্মী

জিতেন্দর মালিক সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে ঢুকেছে। তার পোস্টিং ছিল শ্রীনগরে। তার মা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীতে ঢোকার পর থেকে আমার ছেলে গাড়ি চালিয়ে এদিক ওদিক ঘোরে। ওর খোঁজে এসে পুলিশ গাড়ির ক্ষতি করেছে।’’ জিতেন্দরের ম া এবং প্রতিবেশীরা একবাক্যে বললেন, জিতেন্দর কঠোর নিরামিষাশী, যারা মাংস খায় তাদের ও খুবই অপছন্দ করে। সেনায় যোগ দেওয়ার আগে গবাদি পশুর ট্রাক আটকাত জিতেন্দর, জানিয়েছেন তার মা।

জিতেন্দরের মারুতি সুজুকি গাড়িতে একটি একে ৪৭-এর স্টিকার লাগানো রয়েছে। আরেকটি স্টিকারে লেখা রয়েছে ‘জাঠ’, ‘সেনা’, এবং ‘মালিক’।

আরও পড়ুন, বুলন্দশহরে পুলিশ মৃত্যুতে বজরঙ্গ দলের হাত নেই: বিজেপি বিধায়ক

মুকেশ (৩০), গাড়ির ড্রাইভার

গাজিয়াবাদ থেকে দিন দুয়েক আগে বাড়ি ফিরেছিল মুকেশ। গরুর শব দেখা গেছে এমন গুজব শুনেই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিল সে। তার মা চন্দাবতী বললেন, ‘‘আমি ওকে থামাতে পারিনি। গরুপাচারের ঘটনায় ও হানা দেয়। এরকম বেশ কিছু গাড়ি ও আটকেছে। এই প্রথম এখানে এরকম গরু মারার ঘটনা ঘটল।’’

স্থানীয় এক পুরোহিতের ছেলে মুকেশ পেটের দায়ে গাজিয়াবাদে গাড়ি চালায়। সম্প্রতি তার বিয়ে হয়েছে। এক মাস আগে বাপের বাড়ি গেছেন তার স্ত্রী। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত মুকেশের বাবা ব্রহ্ম সিংয়ের ৬টা গরু ছিল। রোগের কারণে তার মধ্যে ৫ টি গরু মারা গিয়েছে। ব্রহ্ম সিং বললেন, ‘‘গরুর শবের কথা শুনে ওর রাগের কারণ আমি বুঝতে পারি। আমরা জীবনধারণের জন্য গরুর ওপরেই নির্ভরশীল। একটা গরু মারা গেলে একটা পরিবার ধসে যেতে পারে।’’

শচীন (৩৫), কৃষক এবং বিজেপি-র স্বেচ্ছাসেবক

শচীনের মা সরোজ দেবী কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেননি। তাঁর বাড়ির প্রবেশপথের সামনেই একটি গোয়াল রয়েছে। ‘‘আমার ছেলে বিজেপি-র স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং রাম মন্দির ও দুর্নীতিমুক্ত ভারতের কথা ও খুব আবেগের সঙ্গে বলে থাকে।’’

নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনো করেছে শচীন, তাদের পাঁচবিঘা জমি রয়েছে, রয়েছে ৬টি মহিষও। তার পরিবারের লোকজনরা জানালেন ও শচীন খুবই মাথা গরম এবং কোনও গোহত্যার কথা শুনলেই খুবই রেগে যায়। শচীন নিজে কৃষিকাজ করে এবং বাবার সঙ্গে এলাকায় দুধ বিক্রি করে।

বিনীত (৩০), বেকার

পুলিশ হানার পরেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন বিনীতের মা-বাবা। তাঁর এক আত্মীয়া জানালেন, বিনীত ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। আট বছরের একটি ছেলেও রয়েছে তার। ‘‘ওর গরুগুলো কিছুদিন আগে রোগে ভুগে মরে গেছে। গরুদের চিকিৎসা শিবিরে যাওয়ার কথা ছিল ওর। কিন্তু হিংসার কারণে সে শিবির বাতিল হয়ে গেছে।’’

টিংকু (১৮), বেকার

টিংকুর ঠাকুমা শান্তি দেবী জানালেন, সম্প্রতি দিল্লিতে একটা কোর্স করতে গিয়েছিল তাঁর নাতি, তবে শেষ করতে পারেনি। টিংকুর এক আত্মীয়া জানালেন,  বাড়ির লোক টিংকুর একটা বেসরকারি চাকরির চেষ্টা করলেও, ‘‘গোরক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকায় ও চাকরির সময় করতে পারেনি।’’

Read the Full Story in English

Bulandshahr Bajrang Dal
Advertisment