বুলন্দশহর হিংসার ঘটনায় বজরং দল যুক্ত নয় বলে দাবি করলেন বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিং। তাঁর দাবি পুলিশের গুলিতেই মারা গিয়েছেন পুলিশ অফিসার সুবোধকুমার সিং। এ ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে পোহানিয়ার বিধায়ক বলেন, পুলিশ সবোধকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করেনি।
এর আগে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী ওপি রাজভর বুলন্দশহর হিংসার পিছনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ্গ দল, এবং আরএসএস-এর ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন, সোনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে আয়কর পুনর্তদন্তের সুপ্রিম অনুমতি
সংবাদসংস্থা এএনআই এ ব্য়াপারে রাজভরকে উদ্ধৃত করেছে। ‘‘এ ঘটনা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ্গ দল এবং আরএসএসের যৌথ ষড়যন্ত্র। পুলিশ এখন এব্যাপারে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতারও নাম করছে। মুসলিমদের ইজতেমার সময়েই কেন এ ঘটনা ঘটল? এ একেবারেই শান্তি বিঘ্নিত করার চক্রান্ত।’’
রাজভরের অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন রোহানিয়ার বিধায়ক। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে সিং বলেছেন, ‘‘আমার সন্দেহ ওই ইনস্পেক্টর পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। বজরঙ্গ দলের কর্মীরা ইট পাটকেল ছুড়তে পারে, কিন্তু ওরা গুলি চালায় নি। ওখানে ওরা গুলি বন্দুক নিয়ে যায়নি।’’
সোমবার গণহিংসার ঘটনায় পশ্চি উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর গ্রামে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সেখানে উত্তেজিত জনতা গৌহত্যার অভিযোগ তুলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। বেশ কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সিয়ানা পুলিশ চৌকিতে পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে জনতা পাথর ছোড়া শুরু করলে পুলিশ গুলি চালায়।
এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে গঠিত হয়েছে সিট। এফআইআরে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ৫০-৬০ জন অজ্ঞাতপরিচয়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এফআইআরে উল্লিখিত ২৭ জনের মধ্যে অন্তত ৪ জন বজরঙ্গ দল সহ বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী সংগঠনের কর্মী ও নেতা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এরপর কে? প্রশ্ন পুলিশকর্মীর পুত্রের মুখে
মৃত পুলিশ অফিসার সুবোধকুমার সিংয়ের পুত্র অভিষেক বলেছেন, ’’আমার বাবা চাইতেন আমি একজন ভাল নাগরিক হয়ে উঠি। সমাজে যারা ধর্মের নামে হিংসা ছড়ায়, আমি যেন তাদের মত না হই। আজ আমার বাবা হিন্দু-মুসলিম নিয়ে অশান্তির জেরে প্রাণ হারালেন, আগামিকাল কার বাবা প্রাণ দেবেন?’’
এরই মধ্যে সুবোধকুমার সিংয়ের বোন গোটা ঘটনা পুলিশের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছেন। সুনীতা সিং সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আমার ভাই যেহেতু একটা গো হত্যা মামলা (আখলাক গণপিটুনি)-র তদন্ত করছিল, সে কারণেই পুলিশ ষড়যন্ত্র করে ওকে খুন করেছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাইকে শহিদের মর্যাদা দিয়ে আমাদের গ্রামে আমার ভাইয়ের নামে স্মারক বানানো উচিত।’’
যোগী আদিত্যনাথের উদ্দেশে ফেটে পড়েছেন সুনীতা। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি মেনে নিচ্ছি, গরু আমাদের মা। মুখ্যমন্ত্রী সারাক্ষণ গৌ, গৌ, গৌ আউড়ে যাচ্ছেন। গৌরক্ষা করতে তিনি আসতে পারছেন না কেন?’’
সমালোচিত যোগী সরকার
এ ঘটনার পর সমস্ত মহল থেকেই যোগী আদিত্যনাথ সরকারের দিকে সমালোচনার বন্যা ধেয়ে আসছে। সমাজবাদী পার্টির প্রেসিডেন্ট অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেছেন, বিজেপি আমলে হিংসাত্মক ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে। বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী গণহিংসার পিছনে বিজেপি সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ভ্রান্ত নীতিকে দায়ী করেছেন।
অন্যদিকে সিপিএম এই ঘটনার পিছনে যোগী আদিত্যনাথের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক কথাবার্তাকে দায়ী করেছে। তাদের অভিযোগ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে পরিকল্পিত ভাবেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সিপিএম পলিটব্যুরোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য জনতাকে হিংসাত্মক পথ নেওয়ার পথে প্ররোচিত করার বাতাবরণ সৃষ্টি করছে।’’
মঙ্গলবার সন্ধেয় যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক ডেকেছেন। এর আগে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মৃত সুবোধকুমার সিংয়ের পরিবারবর্গের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছেন। সরকার তাঁর পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছাড়াও সুবোধের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য ‘বিশেষ’ পেনশন দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
ক্ষতিপূরণ ছাড়া শেষকৃত্য নয়
এ ঘটনায় সুমিত নামে যে অন্য একজন যুবক নিহত হয়েছেন, তিনি বিক্ষোভে অংশ নেয়নি বলেই মনে করছে পুলিশ। সরকারি কলেজের ছাত্র ওই যুবক এক বন্ধুকে ছাড়তে ওই এলাকায় আসে এবং গণহিংসার ঘটনার মধ্যে পড়ে যায়। তার মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুমিতের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, বাবা-মায়ের পেনশন এবং নিকটাত্মীয়কে পুলিশে চাকরি না দিলে তাঁরা যুবকের শেষকৃত্য করতে দেবেন না। সুমিত কুমারের বাবা অমরজিৎ সিং তাঁর ছেলের জন্য পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংয়ের মত রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্যের দাবি তুলেছেন।