হিংসায় জ্বলছে ফ্রান্স। বিশাল পুলিশ ও সেনা মোতায়েন সত্ত্বেও প্যারিসের আশপাশের শহরে রক্তক্ষয়ী হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে একজন আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সী নিহত হয়। ট্রাফিক আইন ভাঙার দায়ের তাঁকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে বলে অভিযোগ। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। শুরু হয় মার-দাঙ্গা। বহু সরকারি ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। আহাত ৫০০-র বেশি পুলিশ কর্মী। পাল্টা গ্রেফতারের সংখ্যাও প্রায় হাজার ছুঁইছুঁই। বহু চেষ্টাতেও এই অবস্থার বদল হচ্ছ না। তারপরই 'শিল্পের দেশ' ফ্রান্সে শান্তি পুনপ্রতিষ্ঠায় যোগী আদিত্যনাথের মডেল প্রয়োগের দাবিতে টুইট লক্ষ্য করা গিয়েছে। যা ক্রমশ ভাইরাল হয়ে পড়ে সমাজ মাধ্যমে। যা নিয়ে শনিবার পাল্টা টুইট করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দফতরের পক্ষ থেকে।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের টুইটে উল্লেখ, 'যখনই চরমপন্থা দাঙ্গাকে ইন্ধন দেয়, বিশৃঙ্খলা গ্রাস করে এবং বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঙ্কট উদ্ভব হয়, তখনই বিশ্ব সান্ত্বনা চায় এবং রূপান্তরের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে। তখনই শরণাপন্ন হতে হয় উত্তরপ্রদেশের মহারাজজি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যোগী মডেলের।'
এই আকুতিকেই ছড়িয়ে দিতে মরিয়া বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ বিজেপির মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠি একটি ভিডিও প্রকাশ করে বলেছেন, 'একটা সময় ছিল যখন উত্তরপ্রদেশের প্রতিটি জেলা কারফিউ দেখত, সর্বত্র দাঙ্গা হত। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকার দাঙ্গাবাজদের দমন করেছে, তাদের বাড়িঘরে বুলডোজার চালিয়েছে, ইউপিতে দাঙ্গা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর প্রতিধ্বনি শুধু ভারতে নয়, সমগ্র বিশ্বে শোনা যাচ্ছে। আর সে কারণেই ফ্রান্সের মতো দেশে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে যোগী মডেলের প্রশংসা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে। এটি উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য অনুমোদনের একটি বিশ্বব্যাপী স্ট্যাম্প।'
আরও পড়ুন- হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাড়খার ফ্রান্স, মোতায়েন ৪৫ হাজার সেনা
যোগীর ডেপুটি উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যও ফ্রান্সের দাঙ্গা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, বলেছেন, 'দাঙ্গাকারীদের দ্বারা ৮৫০ বছরের পুরানো লাইব্রেরি পুড়িয়েছে। যা ভারতের প্রাচীনতম গ্রন্থাগার নালন্দার অবস্থা মনে করিয়ে দেয়, যেটি ১১৯৯ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি শাসক বখতিয়ার খিলজি ধ্বংস করেছিলেন।'
সম্প্রতি কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া অনিল কে অ্যান্টনি ফ্রান্সে যা ঘটছে তার সঙ্গে নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনের মধ্যে তুলনা করেছেন। ফ্রান্সে যা ঘটছে তাতে দুঃখ প্রকাশ করে অনিল টুইটে লিখেছেন, 'অদূরদর্শী-তোষণ বিশেষজ্ঞ বিরোধী নেতাদের চাপের বিরুদ্ধে কখনও নমনীয় হননি মোদীজি, অমিত শাহ'জি এবং ভারত সরকার। এটাই এঁদের দূরদর্শিতার কথা স্মরণ করার উপযুক্ত সময়। যদিও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল #CAA এর আগে খসড়া তৈরি করা হয়েছিল… (ভারত) আমাদের লক্ষ্য এবং তিনটি প্রতিবেশী দেশ থেকে নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাহায্য করার সম্পূর্ণ অভিপ্রায় আটকে আছে। অন্যথায় স্বার্থান্বেষী অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে অবশ্যই এর অপব্যবহার করা হতো।'
যে টুইটার হ্যান্ডেলটি থেকে প্রথম ফ্রান্সে আদিত্যনাথের 'হস্তক্ষেপ' চাওয়া হয়েছিল সেটি একজন ইউরোপীয় চিকিৎসকের বলে জানা গিয়েছে।