Advertisment

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে অনুমোদন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের

আগামী সপ্তাহেই ক্যাব সংসদে পেশ করা হবে। ইতিমধ্যেই এই বিল পেশের কথা মাথায় রেখে দলীয় সব সাংসদকে বাধ্যতামূলকভাবে শীতকালীন অধিবেশনের বাকি সময়ে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছে বিজেপি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আগামী সপ্তাহেই ক্যাব সংসদে পেশ করা হবে। ইতিমধ্যেই এই বিল পেশের কথা মাথায় রেখে দলীয় সব সাংসদকে বাধ্যতামূলকভাবে শীতকালীন অধিবেশনের বাকি সময়ে হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট বৈঠক হয়। সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ও মানবসম্পদ উন্নয়মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর জানান ক্যাব ছাড়াও, জম্মু-কাশ্মীর সংরক্ষণ বিল(দ্বিতীয় সংশোধনী) ২০১৯, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল ২০১৯ ও কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় বিলেও অনুমোদন দিয়েছে ক্যাবিনেট।

Advertisment

আরও পড়ুন:  বিশ্লেষণ: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) কী, এ নিয়ে এত বিতর্কই বা কেন?

আসামের পর এনআরসি গোটা দেশেই তা লাগু হবে বলে সংসদে জাননিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঝাড়খণ্ডে প্রচারে গিয়ে সোমবারই শাহ গোটা দেশে এরআরসি সম্পন্ন করার নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। জানিয়েছেন ২০২৪ সালের মধ্যেই ভারতে এনআরসি লাগু হবে। তবে এই বিল ঘিরে প্রতিবাদ উঠে এসেছিল উত্তর পূর্বের বিভিন্ন রাজ্ থেকে।

আরও পড়ুন: সদ্যই ক্যাব পেশ সংসদে, দলীয় সাংসদদের বাধ্যতামূলক হাজিরার নির্দেশ বিজেপির

এ বিলের ফলে বহুসংখ্যক বেআইনি বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন বলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে দেশের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিুতে। আশঙ্কা করা হচ্ছে পাল্টে যাবে জনবিন্যাসের ধরন, কাজের সুযোগ কমবে, এবং নিজস্ব সংস্কৃতির ক্ষয় হবে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই প্রস্তাবিত বিলের খসড়ায় সামান্য বদলের আশ্বাস দেন শাহ। জানিয়ে দেন জনবিন্যাসের ধরন ও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ক্ষয় হবে না। প্রত্যেক জনজাতি এই বিলে সুরক্ষিত থাকবেন। প্রয়োজনে ষষ্ঠ তপশিলের অনুমতিও দেওয়া হবে। এরপরই পূর্ব পরিকল্পনামাফিক ফের ক্যাব পাস করানোর তোড়জোড় শুরু করে গেরুয়া শিবির।

ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা। বিরোধীদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতেই মোদী সরকার এই ধরণের বিল সংসদে পাস করানোর চেষ্টা করছে। বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে গতকালই রাজনাথ সিং আশ্বস্ত করে বলেছেন, 'কোনও ধর্মের মানুষই এই বিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।' দেশ জুড়ে এনআরসি লাগুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯-এ ক্ষমতায় ফিরেছে মোদী সরকার। ক্যাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রতিশ্রুতির পথে কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়া বলে মনে করা হচ্ছে।

নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল কী?

এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেবার জন্যই এই বিল। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা।

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের আওতায় ভারতে বসবাসকারী কোনও ব্যক্তি অথবা যাঁর বাবা মা ভারতীয়, অথবা যিনি ভারতে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল জুড়ে বাস করে এসেছেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য। বেআইনি অভিবাসীরা ভারতের নাগরিক হতে পারে না। এই আইনের আওতায়, ১) যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করে থাকেন অথবা ২) বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি এ দেশে বাস করে থাকেন, তাহলে তিনি বিদেশি অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন। বিদেশি আইন ১৯৪৬ এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯২০ মোতাবেক অবৈধ অভিবাসীকে জেলে পাঠানো বা প্রত্যর্পণ করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ‘ভারতে এনআরসি অসম্ভব, বিজেপি রাজনৈতিক অভিসন্ধিতে বলে বেড়াচ্ছে’

২০১৫ ও ২০১৬ সালে সরকার ১৯৪৬ ও ১৯২০ সালের আইনানুসারে অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কিছু গোষ্ঠীকে ছাড় দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রীষ্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধ অভিবাসীদের ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে বাস করলেও তাঁদের জেলে বা নিজেদের দেশে পাঠানো হবে না। ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সংসদে আনা হয়েছে যাতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করে এই ব্যক্তিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া যায়।

লোকসভায় এ বিল প্রথমবার পেশ হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। সে বছরের ১২ অগাস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাশ হয়। ষোড়শ লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে সরকার এ বিল রাজ্যসভায় আনার জন্য অতি তৎপর হয়ে ওঠে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেওয়ায় সরকার সংযত হয় এবং ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা সিনে ডাই হয়ে যায়। বিল আর পেশ করা হয়নি। সংসদের কার্য প্রণালী অনুসারে লোকসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্য সভায় পেশ না হলে তামাদি হয়ে যায়। সে নিয়ম অনুসারে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও তামাদি হয়ে গিয়েছিল। ফলে চলতি অধিবেশনেই সংসদে ক্যাব পাস করাতে মরিয়া মোদী সরকার।

Read the full story in English

Parliament
Advertisment