ইন্টারনাল ব্লিডিং শুরু হয়েছে কাল রাত থেকেই, স্টুলে মিলেছে রক্ত, অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবু হাসপাতালে যাবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন অনিকেত চ্যাটার্জি, হস্টেলের দাবিতে অনশনরত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র ছাত্রদের একজন। অনশনের ১৭৬ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে ক্রমশ। ছাত্ররা স্পষ্ট জানিয়েছেন, আজ রাত নটার মধ্যে কর্তৃপক্ষ যদি এই সমস্যার সমাধান না করেন, আগামিকাল থেকে ১০০ জন ছাত্রছাত্রী আমরণ অনশনে বসবেন অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল কুমার ভদ্রের ঘরের সামনে।
আন্দোলনকারী ছাত্র সায়ন্তন মুখুটির কথায়, অনশনে অসুস্থ ছাত্রদের মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট প্রথমে দেখতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। এরপর বাইরের ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করান তাঁরা। দুটো রিপোর্টই হাতে পেলে তাঁরা দেখেন, হাসপাতালে করা টেস্ট-এর সঙ্গে বাইরের রিপোর্টের কোনও মিল নেই। এই প্রেক্ষিতে ছাত্ররা গুরুতর অভিযোগ এনেছেন উচ্ছ্বলবাবুর বিরুদ্ধে এই বলে, যে তাঁর মদতেই বদলে দেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট। ওদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, টেস্টের রিপোর্টে অসঙ্গতি প্রযুক্তিগত কারণেও দেখা দিয়ে থাকতে পারে।
পড়ুয়াদের অনশনকে সমর্থন জানিয়ে সোমবার অনশনে বসেছিলেন কিছু অভিভাবকও। তাঁদের সঙ্গেও সোমবার বৈঠক করেছেন উচ্ছলবাবু। কিন্তু দু’পক্ষ সহমত হতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই, অনশনরত পড়ুয়াদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি অনশনরত পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াল অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিসেস, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম, এই তিনটি চিকিৎসক সংগঠন। ডাঃ সিদ্ধার্থ গুপ্ত এবং পূর্ণব্রত গুন সহ প্রাক্তন ছাত্ররাও যোগ দিয়েছেন অনশনে। ছাত্রদের প্রাপ্য দাবি মিটিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক এই মর্মে অধ্যক্ষের কাছে একটি ডেপুটেশনও জমা দেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রিন্সিপাল যা করছেন তা একেবারেই ঠিক নয়।
মঙ্গলবার দুপুরে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন উচ্ছ্বলবাবু সহ মেডিক্যাল বোর্ডের অন্যান্য শিক্ষকরা। সেখানে অধ্যক্ষ বলেন, "সাধারণত যাঁরা আবেদন করেন তাঁদের মধ্য়ে কোন ছাত্র কত দূর থেকে আসেন সেই নিরিখেই হস্টেলের ব্যবস্থা করা হয়। তবে গত দু'বছর কোনও হস্টেল কাউন্সেলিং হয়নি।" তিনি জানিয়েছেন এখনও প্রচুর সিট ফাঁকা রয়েছে। ধীরে ধীরে সমস্ত ব্যবস্থাই করা হবে, তবে তার জন্য সময় দরকার। যদিও অধ্যক্ষের কথায়, মুখোমুখি কথা বলেই যে সমস্যার সমাধান করা যেত, তাকে অযথা জটিল করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন "আমার মনে হয় শুধু হস্টেলের চাহিদা নয়, এই আন্দোলনের অন্য কোনও কারণও রয়েছে। সেটা কী আমার জানা নেই। আমি চাই ছাত্রদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এবং তারা অনশন প্রত্যাহার করে নিক।"
সাংবাদিক সন্মেলনের শেষে ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় যখন উচ্ছলবাবু আচমকা অসুস্থ বোধ করেন এবং তাঁকে হুইলচেয়ারে করে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর পরিচর্যাকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে এরপর উত্তপ্ত বাদানুবাদ হয় ছাত্রদের।
প্রসঙ্গত, আন্দোলনের জেরে মঙ্গলবার ২৭৬টি সিট অ্যালটমেন্ট করে একটি তালিকা প্রকাশ করেন কর্তৃপক্ষ, কিন্তু এতে বিক্ষোভের মাত্রা আরও চড়া হয়। ছাত্রদের দাবি, এভাবে নয়, সঠিক নিয়ম মেনে স্বচ্ছভাবে হস্টেল কাউন্সেলিং হোক। সায়ন্তনের বক্তব্য, "স্যার নিজেই জানেন না তাঁর ছাত্ররা কে কোথা থেকে আসছে এবং কোথায় থাকছে। কিছু না জেনেই এমন একটা তালিকা প্রকাশ করা অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার সামিল। তা ছাড়াও, হস্টেল কাউন্সিল বোর্ডের সুপার সৌগত ঘোষ যেখানে গত দুবছরে একবারও হস্টেলে আসেননি, সেখানে কীভাবে হস্টেল বরাদ্দ করে তালিকা টাঙানো হল এটা বুঝতে পারছি না।"
অনশনরত ছাত্রদের বক্তব্য, নতুন ভবন তৈরির সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, মেইন বয়েজ হস্টেলের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে নতুনটিতে সিনিয়র ছাত্রদের রাখা হবে। কিন্তু নতুন অধ্যক্ষ আসার পর সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়া হয়েছে। সায়ন্তন বলেন, "গত তিন-চার বছর ধরে সিনিয়র পড়ুয়ারা ভাড়া করা ঘরে থেকে পড়াশোনা করেছেন। এ বছর যাঁরা নতুন ভর্তি হলেন, তাঁদের হস্টেল পাইয়ে দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই।"
এ বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের যুক্তি, এমসিআই-এর নির্দেশ মেনেই নতুন ভবনে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র্যাগিং রুখতে একই ভবনে সিনিয়র ছাত্রদের রাখা সম্ভব নয়। যাঁরা অ্যান্টি র্যাগিং রেগুলেশনে সই করেছেন তাঁদের সঙ্গে কোনওভাবেই ফার্স্ট ইয়ারদের রাখা যাবে না। তাছাড়াও, ১১-তলার নতুন হস্টেল তৈরির আগেই কোন ভবনের কোন তলে কী থাকবে তা নির্ধারিত হয়েছিল। কাজেই এক্ষেত্রে নতুন হস্টেলে একেবারেই সিনিয়রদের রাখা যাবে না বলে সাফ জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।