কয়েক দশক ধরে, মন্দিরে উপাসনা করেন রাম আসরা। তিনি মন্দিরে কীর্তন করেন। সম্প্রতি তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেসনোতে শ্রীগুরু রবিদাসের সভাতেও কীর্তন করলেন। মন্দিরের প্রার্থনা কক্ষে এক মঞ্চে আড়াআড়িভাবে বসে হারমোনিয়াম বাজালেন। ভক্তরা তাঁদের চোখ বন্ধ করে শান্তভাবে তাঁর গান শুনে দুলছিলেন। কিন্তু, মন্দিরের মত পবিত্র স্থানগুলোর সবকটায় আসরার অভিজ্ঞতা কিন্তু, এত ভালো হয়নি।
তিনি ভারতের প্রাক্তন অস্পৃশ্য বর্ণের একজন সদস্য। আসরা জানিয়েছেন, এক সময় তাঁকে অন্য এক মার্কিন মন্দিরে একপাশে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁকে রান্নাঘরে প্রবেশ না-করতে বলা হয়েছিল। আসরার কথায়, 'আমি সেই সময় খুব অসম্মানিত বোধ করেছিলাম।' আর, এই সব কারণেই আসরা ফ্রেসনোর রবিদাসিয়া মন্দিরে অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করেন। এখানকার সদস্যরা ১৪ শতকের ভারতীয় শিক্ষক গুরু রবিদাসকে অনুসরণ করেন। গুরু রবিদাসও অতীতকালের অস্পৃশ্য বর্ণের ছিলেন। যার সদস্যরা দলিত নামেও পরিচিত। হিন্দিতে যার অর্থ হল 'ভাঙা'।
মার্কিন জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই সমতায় বিশ্বাসী। সেই সমতাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই তাঁরা আইন করে ক্যালিফোর্নিয়ায় জাতিগত বৈষম্য নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্ণ হল জন্ম এবং বংশের ভিত্তিতে মানুষের বিভাজন। জাতিগত বৈষম্য বিরোধী আইনটি পাস হলে ক্যালিফোর্নিয়া হবে প্রথম অবৈষম্যমূলক আইনে বর্ণভেদ যুক্ত করা মার্কিন রাজ্য। সিয়াটেল প্রথম মার্কিন শহর, যারা এমন আইন পাশ করেছে। শুধুমাত্র ক্যালিফোর্নিয়াতেই পাঁচটি রবিদাসিয়া মন্দির আছে — ফ্রেসনো, পিটসবার্গ, রিও লিন্ডা, সেলমা এবং ইউবা সিটিতে। আর ষষ্ঠটি ইউনিয়ন সিটিতে তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন- সিদ্ধান্ত বদল কুস্তিগিরদের, গঙ্গায় পদক ফেলার আগে কেন্দ্রকে সময়সীমা বজরং-ভিনেশ-সাক্ষীদের
ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট্রাল ভ্যালিতে রবিদাসিয়া সম্প্রদায়ের প্রায় ২০,০০০ সদস্য রয়েছে। তাদের একটি বিশাল অংশের শিকড় রয়েছে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পঞ্জাবে। মার্কিন জাতিগত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন রবিদাসিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ফ্রেসনো মন্দিরের দেওয়ালে বিলটি সমর্থনের চিহ্ন আঁকা হয়েছে। এই মন্দিরের সভাপতি অমর দারোচ বলেছেন যে বর্ণভেদ নির্মূল করা রবিদাসিয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য। দারোচ জানান, গুরু রবিদাস এক শ্রেণি এবং বর্ণহীন সমাজের কল্পনা করেছিলেন। যাকে তিনি 'বেগমপুরা' নামে অভিহিত করেছেন। হিন্দিতে এর অর্থ, 'একটি দুঃখহীন দেশ।'