ক্যানিংয়ে গোষ্ঠী কোন্দল, বোমা-গুলি, গুলিবিদ্ধ হয়ে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ নিল শাসক দল। ব্লক যুব সভাপতির পদ থেকে পরেশ রাম দাসকে অপসারণ করা হল বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘটনায় ছ'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর পাশাপাশি দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। এলাকায় মোতায়েন রয়েছে প্রচুর পুলিশ বাহিনী। রবিবারের সংঘর্ষের পর সোমবার সকাল থেকেও থমথমে ক্যানিং।
স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার ক্যানিং-১ যুব তৃণমূল কংগ্রেস এর পক্ষ থেকে নব নির্বাচিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা সেখ কে সর্ম্বধনা দেওয়া আয়োজন করে ক্যানিং বাসস্ট্যান্ডে।আর এই অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য ক্যানিংয়ের ইটখোলা অঞ্চল থেকে কয়েকশো তৃণমূল কর্মী সমর্থক আসছিল মিছিল করে।সেই সময়ে কয়েক জন দুষ্কৃতী মিছিল কে লক্ষ করে গুলি বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। মুহূর্মুহূ গুলি বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে গ্রাম। গুলিবিদ্ধ হয়ে তৃণমূল কর্মী মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং জখম হন আরও ২ জন তৃণমূল কর্মী। এই ঘটনার পরই এলাকায় প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।উত্তেজিত তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে দেহ আটক গোলবাড়িতে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে পুলিসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় উত্তেজিত জনতা। তারা পুলিসের গাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। পুলিসকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ। সন্ধা পর্যন্ত মৃতদেহ আটকে রেখে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এলাকার মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ক্যানিং থানা থেকে বিশাল পুলিস বাহীনি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।ঘটনায় আহত হন জীবনতলা থানার ওসি।
ঘটনায় তৃণমূলের একাংশ ব্লক যুব সভাপতি পরেশ রাম দাসের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জানা গিয়েছে, ঘটনায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ ক্যানিং ২ নং যুব তৃণমূল কংগ্রেস এর সভাপতি পরেশ দাস কে অপসারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেস এর কার্যকরী সভাপতি অনিরুদ্ধ হালদার বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতন পরেশ রাম দাস কে অপসারণ করা হয়েছে।"
অন্যদিকে রবিবার পর সোমবার সকাল থেকে একেবারে থমথমে ক্যানিং এর গোলাবাড়ি এলাকা। আতঙ্কে পুরুষ শূন্য গোটা গ্রাম। মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এর পাশাপাশি এলাকায় পুলিশ ও র্যাফ টহলদারি চালাচ্ছে। গতকালের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ এলাকায় ঢুকলে তা নিয়ে আবারও সরব হতে পারেন স্থানীয়রা। এর ফলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। সেই আশঙ্কায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী র্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ক্যানিং ১ নং ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস এর সভাপতি শৈবাল লাহিড়ি এবং যুব তৃণমূলের সভাপতি পরেশ রাম দাসের মধ্যে এলাকা দখল নিয়ে দীর্ঘদিনের লড়া। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কাল থেকে ভোটের পরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বরাবরই উত্তেজনা ছড়িয়েছে ক্যানিং এলাকায়। রবিবার যুব তৃণমূলের মিছিলকে ঘিরে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি খতিব সর্দার বলেন, "বিজেপি ও আর এস এস যুব তৃণমূলের সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের উপরে আক্রমণ করে।" তাঁর কথায় মিছিলের সামনের সারিতে ছিল মহিলারা পিছনে ছিল সশস্ত্র বাহিনী তারা মহিলাদের টপকে এসে গুলি চালিয়ে আমাদের কর্মীকে খুন করছে।এ বিষয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার অরিজিৎ সিনাহা বলেন, "ঘটনার তদন্ত চলছে, এলাকায় তল্লাশি চলছে, এখন পর্যন্ত ৬ জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে দুটি ওয়ান শটার।"