Advertisment

স্ত্রীকে বলেছিলেন ফিরে ফোন করবেন, অপেক্ষায় রেখেই শহিদ ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন

'আমাদের তো পৃথিবীটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল', বলছেন ক্যাপ্টেন প্রাঞ্জলের বাবা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
capt pranjal

ডিসেম্বরেই পদোন্নতি, মেজর হওয়ার কথা ছিল। (এক্সপ্রেস ছবি)

স্ত্রী অদিতিকে শেষ বার্তায়, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ক্যাপ্টেন এমভি প্রাঞ্জল বলেছিলেন, অভিযানে বেরোচ্ছেন। ফিরে, বৃহস্পতিবার ফোন করবেন। কিন্তু, সেটাই হয়ে গেল তাঁর শেষ ফোন। আর ফোন করা হল না ভারতীয় সেনার এই ক্যাপ্টেনের। ওই অভিযানে জম্মু-কাশ্মীরের রজৌরিতে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনি প্রাণ হারান। ভারতীয় সেনার মোট চার সদস্য এই অভিযানে শহিদ হয়েছেন। ক্যাপ্টেন প্রাঞ্জল তাঁদেরই অন্যতম। আচমকা এমন খবরে শোকে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। বৃহস্পতিবার এনিয়ে বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন প্রাঞ্জলের বাবা এম ভেঙ্কটেশ বলেন, 'বুধবার, কমান্ড সেন্টার থেকে ফোন পেয়েছি। আমাদের পৃথিবীটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।'

Advertisment

শোকসংবাদ পাওয়ার একদিন পরে, ব্যানারঘাটা রোডের কাছে বেঙ্গালুরুর নন্দনভানা উপকণ্ঠের বাড়িতে, পৌঢ় এম ভেঙ্কটেশ এখন ব্যস্ত, ছেলের দেহ কখন বাড়িতে আসবে, তা জানতে। বারবার ফোন করছেন সেনাকর্তাদের। একমাত্র ছেলে, সেই চিরতরে চলে গেল। ভেঙ্কটেশ বলেন, 'আমি ৪-৫ দিন আগে ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। শেষ কথা হয়েছিল অদিতির সঙ্গে। অদিতিই বলেছিল যে ও অপারেশনে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কথা বলতে পারবে না। আমরা বৃহস্পতিবার ওর ফোন আসবে, সেই অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু, এখন ফোনের বদলে মৃতদেহ আসবে।'

ভেঙ্কটেশ ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের প্রাক্তন কর্তা। স্ত্রী অনুরাধা গৃহবধূ। ছেলে প্রাঞ্জলের বয়স ২৯। বউমা অদিতি আইআইটি চেন্নাই থেকে পিএইচডি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ভেঙ্কটেশ বলেন, 'দু'বছর আগে ২০২১-এর আগস্টে প্রাঞ্জল-অদিতির বিয়ে হয়। দু'জনেই প্রতিষ্ঠিত। নিজেদের পেশায় ব্যস্ত। ৯ ডিসেম্বর প্রাঞ্জলের পদোন্নতির কথা ছিল। মেজর হত, তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।'

ম্যাঙ্গালুরুতে জন্ম শহিদ ক্যাপ্টেন প্রাঞ্জলের। সেখানেই বেড়ে ওঠা। ডিপিএস এমআরপিএল স্কুলে, তার পরে মহেশ পিইউ কলেজে লেখাপড়া। ভেঙ্কটেশ বলেন, 'ছোট থেকেই প্রাঞ্জল খুব সাহসী ছিল। স্বাধীনচেতা, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিত। আমার মনে আছে ও যখন ক্লাস ৩-তে, আমি দিল্লিতে ছিলাম। বাড়িতে অনুরাধা আচমকা ছটফট করতে শুরু করেছিল। প্রাঞ্জলই তখন প্রতিবেশীদের ডেকে অনুরাধাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাঞ্জল তখন থেকেই জানত, কী করতে হবে। আমরা পরে জানতে পেরেছি যে এটি একটি ইসকেমিক অ্যাটাক ছিল।'

WhatsApp Image 2023-11-23 at 3.35.22 PM
(বাম থেকে ডানে) প্রাঞ্জল, তাঁর স্ত্রী অদিতি, মা অনুরাধা এবং বাবা ভেঙ্কটেশ। (এক্সপ্রেস ছবি)

ভেঙ্কটেশ বলে চলেন, 'আমার মনে আছে, ও যখন ক্লাস দশম শ্রেণিতে পাশ করল, আমি ওকে ইলেভেনে ভর্তির জন্য ম্যাঙ্গালুরুর এক কলেজে নিয়ে গেছিলাম। প্রিন্সিপাল মার্কস দেখে বলেছিলেন, এত কম নম্বর কেন? প্রাঞ্জল সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিল, ও ওই কলেজে ভর্তি হবে না। এরপর মহেশ পিইউ কলেজে ভর্তি হয়। নিজের ব্যাপারে ও এভাবেই সিদ্ধান্ত নিত। ও যে সঠিক ছিল, সেটা প্রমাণ হয় সেনার ভর্তি পরীক্ষায়। ও লিখিত পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছিল।'

আরও পড়ুন- আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ২৫ বছর: কেন এটি তৈরি হয়েছিল, কী এর কাজ?

ক্লাস ১২ পাশের পর, প্রাঞ্জল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে বেঙ্গালুরুর আরভি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এও ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু, তার মধ্যেই ২০১৪ সালে সেনায় সুযোগ পায়। ভেঙ্কটেশ বলেন, 'ছোট থেকেই প্রাঞ্জলের ভারতীয় সেনার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু, সেটা পূরণ না-হওয়ায় ও স্থলসেনায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়।' ৬৩ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে ছিল। সেনা সূত্রে খবর, গোয়েন্দাদের থেকে খবর পেয়েই দলবল নিয়ে ক্যাপ্টেন প্রাঞ্জল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়েছিলেন। কাছাকাছি যেতেই জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর দলের গুলিবিনিময় শুরু হয়। তখনই তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

Terrorist Attack Army Encounter Death Indian army IIT Jammu & Kashmir Kashmir Encounter Kashmir Military Encounter
Advertisment