সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মাকে দায়িত্ব থেকে অপসারিত হতে হয়েছে ২৫ অক্টোবর মাঝরাতে। সিবিআই প্রধানের নিয়োগ এবং অপসারণের দায়িত্বে থাকা কমিটিতে তিনজন সদস্য থাকলেও রাতারাতি ক্ষমতায় রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী একাই। এই ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে নানা মহলে। বিরোধীরা বলেছেন এই ঘটনা ভারতীয় সংবিধানের রীতি বহির্ভূত। সংস্থার ভেতরে চলতে থাকা মতবিরোধ, বাদানুবাদে এখন সরগরম সিবিআই দফতর।
আরও পড়ুন: সিবিআই, রাজনীতিকরণ এবং অবক্ষয়; ‘সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে’
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক রাকেশ আস্থানা এবং অলোক ভার্মার কেরিয়ার গ্রাফের দিকে।
রাকেশ আস্থানা গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস আধিকারিক। সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিটির নেতৃত্বে এক নির্বাচন কমিটি আস্থানাকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে উন্নীত করে। ভদোদরার পুলিশ কমিশনার হিসেবে বেশ কিছু বছর দায়িত্ব সামলেছেন। রাহুল গান্ধী সহ বিরোধী দলনেতারা তাঁকে নরেন্দ্র মোদীর 'চোখের মণি' হিসেবেই পরিচয় দিয়ে থাকেন। ২০০২ সালের গোধরা কাণ্ডের তদন্তভার তাঁর উপরেই ছিল। পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে লালু প্রসাদকে গ্রেফতার করা থেকে শুরু করে বিজয় মালিয়ার তছরুপের তদন্তের ভার সামলেছেন আস্থানা।
অলোক ভার্মা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ২৭তম প্রধান। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নিযুক্ত হয়েছিলেন। অরুণাচল প্রদেশ-গোয়া-মিজোরাম ক্যাডারের ১৯৭৯ সালের আইপিএস অফিসার। দিল্লির পুলিশ কমিশনার পদে দায়িত্ব সামলেছেন।
গোটা ঘটনায় সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের ভূমিকা কী?
সিভিসি-র আসল কাজ হল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাজ তদারকি করা। রাকেশ আস্থানা সিভিসি-র কাছে অভিযোগ আনেন, অলোক ভার্মা তাঁর কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে আস্থানার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। মঙ্গলবার মাঝরাতে দায়িত্ব থেকে অপসারণের পর কেন্দ্র জানায়, ভার্মা সিবিআই-এর তদন্তের কাজে সাহায্য করছিলেন না। একাধিক বার আস্বস্ত করা সত্তেও কমিশনের কাছে সঠিক তথ্য জমা দেননি ভার্মা।
আরও পড়ুন: নাগেশ্বরের নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা কেড়ে অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে সিভিসি-কে ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
গোয়েন্দা প্রধানের অপসারণ নিয়ে আইন কী বলে?
বিরোধী পক্ষের অধিকাংশ নেতাই বলছেন যে প্রক্রিয়ায় অলোক ভার্মাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে, তা অসাংবিধানিক। আইনজীবী-সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণ টুইট করে বলেছেন, গোয়েন্দা প্রধানকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করার অধিকার প্রধানমন্ত্রীর নেই। "এটা সিবিআই বনাম সিবিআই লড়াই নয়। বরং সিবিআই বনাম প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সুপারিশ করা এক দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকের লড়াই।"
সিবিআই-এর ক্ষমতার রদবদল প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও।
১৯৯৭ সালের আগে পর্যন্ত গোয়েন্দা প্রধানের নিয়োগ এবং অপসারণ অথবা তাঁর মেয়াদ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম ছিল না। বিনীত নারায়ণ মামলায় শীর্ষ আদালত রায় দেয়, গোয়েন্দা প্রধানকে ন্যূনতম দু'বছর স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে করা আবেদনে অলোক ভার্মা উল্লেখ করেছেন 'দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এসটাবলিশমেন্ট' আইনের চার নম্বর ধারা অনুযায়ী তাঁকে দু'বছর দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি।
সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং বিরোধী দলনেতা, এই তিন সদস্য নিয়ে গঠিত দলের মিলিত সিদ্ধান্ততেই গোয়েন্দা প্রধানের নিয়োগ এবং অপসারণ সম্ভব। দলের বাকি দুই সদস্যকে এড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন সিবিআই-এর অপসারিত শীর্ষ আধিকারিক অলোক ভার্মা।
Read the full story in English