‘‘ছেলের মৃত্যুর তদন্তের জন্যে গোটা দেশে ঘুরতে রাজি আছি। সিআইডিতে ভরসা নেই আমাদের। দাড়িভিটের ঘটনার সিবিআই তদন্ত চাই।’’ শিলিগুড়িতে এবিভিপির ডাকা সমাবেশে এসে এমনই মন্তব্য করলেন ইসলামপুরে আন্দোলনে নিহত রাজেশের মা। অন্যদিকে, কলকাতা সহ রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা এবিভিপি সমর্থকদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ট্রেন থেকে নামতেই তাদের উপরে হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন এবিভিপি সমর্থক আহত হয়েছে। কারো মাথায় চোট লেগেছে, কারো পায়ে আঘাত লেগেছে বলে জানানো হয়েছে। এবিভিপির পক্ষ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি জিআরপিতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। রেলের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেইমতো পৃথক তদন্ত শুরু করেছে আরপিএফ।
ইসলামপুরের দাড়িভিটে ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহতদের মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবিতে শুক্রবার শিলিগুড়িতে মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ(এবিভিপি)। কিন্তু শহরে মুখ্যমন্ত্রী থাকায় মিছিল বা সমাবেশের কোন অনুমতি দেয়না পুলিশ। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই মিছিলের প্রস্তুতি নেয় এবিভিপি। শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের সামনে তারা জড়ো হতে শুরু করে। এসিপি ইস্ট অচিন্ত্য গুপ্ত এবং এসিপি ডিডি অভিজিৎ সাহার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানেই আটকে দেয় তাদের। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ইসলামপুরে মৃত দুজনের মা। তাঁরা এবিভিপি সমর্থকদের সঙ্গে ধরনায় বসেন। অন্যদিকে, কলকাতা ও অন্যান্য জেলা থেকে এবিভিপি সমর্থকেরা এনজেপিতে এসে পৌঁছানোর পর স্টেশন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলেই স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকেরা তাদের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। লাঠি, বাঁশ, পাথর, বেল্ট নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। প্রাণে বাঁচতে স্টেশন মাস্টার ও অন্যান্য ঘরে ঢুকে পরে এবিভিপি সমর্থকেরা। সেখানে ঢুকেও তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর চালানো হয় স্টেশন চত্বরে। ঘটনায় জখম হন এবিভিপি সমর্থক বাবলি মুখার্জি, সম্রাট দাস। তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। খবর পেয়েই আরপিএফ,জিআরপি ও এনজেপি থানার বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। দিনভর এবিভিপি কর্মীদের পাহারা দেয় আরপিএফ। সন্ধ্যায় তাদের পুলিশি ঘেরাটোপে ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার খবর সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রচারিত হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে দিল্লি। এনজেপি আরপিএফ-এর আইসিকে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ চান রেলের পদস্থ কর্তারা। এদিকে এবিভিপির মিছিল বানচাল করতে তড়িঘড়ি টিএমসিপির পক্ষ থেকে একটি মিছিল বের করা হয় শহরে। সেই মিছিলে পা মেলান মন্ত্রী গৌতম দেব। অভিযোগ, কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্র-ছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয়।
গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক সপ্তর্ষি সরকার। তিনি বলেন, ’‘রাজ্যে যে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই আজ তা প্রমাণিত হল। আমাদের আন্দোলন আরও বড় আকার ধারণ করবে।’’ তৃণমূল নেতা তথা এনজেপি আইএনটিটিইউসির সভাপতি প্রসেনজিত রায় বলেন, ‘‘তৃণমূল কাউকে মারেনি। আমরা মারলে ওরা হাসপাতালে থাকত। উলটে ওরা আমাদের মেরেছে।’’
এসআরপি জিআরপি আন্নাপ্পা ই বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’