শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশে সিবিআই প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন চন্দবাবু নাইডু। পশ্চিমবঙ্গে একই পথে হাঁটলেন মমতাও। দুই রাজ্যেই সিবিআই প্রবেশের ব্যাপারে সাধারণ সম্মতি তুলে নিল সংশ্লিষ্ট সরকার। রাজ্যসরকারের দাবি সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় সিবিআই ক্রমশ তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে।
সাধারণ সম্মতি বিষয়টি কী?
ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি (এনআইএ) যেমন এনআইএ আইন অনুযায়ী কাজ করে, সিবিআই কাজ করে দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এসট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট অনুসারে। এই আইন অনুযায়ী সিবিআই তদন্ত করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সম্মতির প্রয়োজন।
সেক্ষেত্রে দু'ধরনের সম্মতি রয়েছে। একটি হল কোনো মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ভাবে সম্মতি। দ্বিতীয়টি হল সাধারণ সম্মতি। রাজ্যের কোনও মামলার ক্ষেত্রে তদন্ত করতে হলে সিবিআই-এর রাজ্য সরকারের সম্মতির দরকার হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে সিবিআই যাতে স্বাধীনভাবে তদন্ত চালাতে পারে, সেই কারণে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের তরফ থেকে সাধারণ সম্মতি দেওয়া হয়। সাধারণত এই সম্মতি দিয়ে দেয় সব রাজ্যই। সাধারণ সম্মতি না দেওয়া হলে প্রতিটি তদন্তের ক্ষেত্রে আলাদা করে রাজ্যের সম্মতি দরকার হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পশ্চিম রেলের অধীনে কাজ করা মুম্বই-এর এক কর্মীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করতে হলে আগে মহারাষ্ট্র সরকারের সম্মতি দরকার।
সম্মতি প্রত্যাহারের অর্থ কী?
এর অর্থ হল অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে কোনো সরকারি কর্মচারী অথবা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত কারোর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া মামলা নথিভুক্ত করতে পারবে না সিবিআই। অর্থাৎ কিনা রাজ্যে প্রবেশ করলেই সিবিআই আধিকারিক পুলিশের সব ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হবেন, যতক্ষণ না রাজ্য সরকার তাঁকে সে ক্ষমতা দিচ্ছে।
কোন পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহার করা যায়?
দিল্লি স্পেশাল পুলিশ এসট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট-এর ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহার করা যায়। ৬ নম্বর ধারায় বলা রয়েছে, ৫ নম্বর ধারায় সিবিআই-এর যে সমস্ত অধিকারের কথা ব্যক্ত রয়েছে তার কোনোটিই রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়।
সিবিআই কি তবে নতুন কোনও মামলা নথিভুক্ত করতে পারবে না? নতুন মামলার ক্ষেত্রে কী হবে?
যে সমস্ত মামলায় ইতিমধ্যে তদন্তের ভার সিবিআই নিয়ে ফেলেছে, সে সবের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না। নতুন তদন্তের ক্ষেত্রেই একমাত্র রাজ্য সরকারের সম্মতি প্রয়োজন। নতুন মামলার ক্ষেত্রেও অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে মামলার নথিভুক্তিকরণ হবে না, দিল্লিতে নথিভুক্ত করিয়ে তদন্ত করতে হবে।
সিবিআই -এর ওপর রাজ্য সরকারের সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহারের ঘটনা কি এই প্রথম?
এর আগেও একাধিক রাজ্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সিকিম, নাগাল্যান্ড, ছত্তিসগড় এবং কর্ণাটকেই ঘটেছে এমনটা। ১৯৯৮ সালে ঝাড়খণ্ড সরকার সিবিআই এর প্রবেশের ব্যাপারে সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। আট বছর সেরকমই ছিল। সিবিআই কার্যত তাদের দফতরও বন্ধ করে দিয়েছিল। তদন্তের খাতিরে সিবিআই-কে প্রত্যেকবার আলাদা আলাদা ভাবে সম্মতি নিতে হত রাজ্য সরকারের কাছ থেকে।
Read the full story in English