সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মার মামলার সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আর দুদিন বাকি। গত ২৩ অক্টোবর তাঁকে সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছুটিতে পাঠানোর সরকারি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন জমা করেন বর্মা। কিন্তু সোমবার দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার অন্দরে নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী অধিকর্তা এম নাগেশ্বর রাও ১১ নভেম্বর জারি করা নির্দেশের মাধ্যমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সঞ্জয় ভান্ডারী এবং আয়কর আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মামলা তামাদি করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২৬ অক্টোবর জারি করা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাওয়ের কাজ ছিল সিবিআইয়ের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া, কোনওরকম বড়সড় বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়। ১১ নভেম্বর যে মামলার ফাইল বন্ধ করে দেন রাও, সেটি জুন ২০১৬-তে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করে সিবিআই। অভিযুক্ত ছিলেন ভান্ডারী, তাঁর দুই ছেলে শ্রেয়াংশ ও দিব্যাংশ, এবং ন'জন আয়কর আধিকারিক, যাঁদের মধ্যে ছিলেন দিল্লির মুখ্য আয়কর কমিশনার এস কে মিত্তল। তাঁদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল যে তাঁরা ভান্ডারীর কাছ থেকে অবৈধভাবে নানারকম সুবিধে নেন, যেমন পাঁচতারা হোটেলে থাকা, বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবস্থা, এবং প্লেনে যাতায়াতের খরচ। বদলে তাঁরা ভান্ডারীর মক্কেলদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধে করে দেন।
আরও পড়ুন: জালিয়াতিতে অভিযুক্ত সিবিআইয়ের সহকারী আইনি উপদেষ্টা
এই মামলার আড়ালে রয়েছে আরেকটি মামলা, যেটি দায়ের হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে, যাতে উল্লিখিত ছিলেন ভান্ডারী এবং যুগ্ম কমিশনার সাল্লং ইয়াদেন, যিনি শ্রেয়াংস ভান্ডারীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে গ্রেফতার হন বলে খবর। রাও যে আদেশ জারি করেছেন, তা ৭ জুন জারি করা অলোক বর্মার নির্দেশকে সরাসরি খণ্ডন করছে। চেন্নাইয়ের দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলাটি বন্ধ করে দেয় ১৩ মার্চ, কিন্তু এরপর মাদুরাইতে ট্যুরে গিয়ে বর্মা শুধু যে মামলা তামাদি করতে রাজি হননি তাই নয়, উল্টে তদন্ত পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেন। ৯ নভেম্বর এই মর্মে একটি নোট পেশ করেন সিবিআইয়ের অতিরিক্ত অধিকর্তা প্রবীণ সিনহা, যাতে তিনি উল্লেখ করেন, "মাদুরাইয়ে থাকাকালীন বর্মা মৌখিকভাবে মামলা নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দেন"। সিনহার এই নোটের প্রেক্ষিতেই রাও তাঁর নির্দেশ জারি করেন।
প্রসঙ্গত, মার্চ মাসে সিবিআইয়ের চেন্নাই জোনের যুগ্ম ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হিসেবে রাওই ভান্ডারী মামলা তামাদির সুপারিশ করেন। মে মাসে দিল্লির সিবিআই সদর দপ্তরে বদলি হন রাও, এবং অন্তর্বর্তী অধিকর্তা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন গতমাসে।
সিবিআইয়ের এক মুখপাত্র রাওয়ের নির্দেশের স্বপক্ষে এবং বর্মার বিপক্ষে জানান, "যথাযথ তদন্তের পর প্রমাণের অভাবে ভূতপূর্ব অধিকর্তা (রাও) ১৩.৩.১৮ তে কেস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ওই ফাইল আবার খোলার আবেদন আসে অন্তর্বর্তী অধিকর্তার কাছে, কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি তার অনুমোদন করলে তাঁকে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে যেতে হতো। কাজেই নতুন করে তদন্ত শুরু করার আবেদন খারিজ হয়ে যায়।"