কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে রবিবার সিবিআই হানা দেওয়া নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছে শহর। পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সিবিআই হানার প্রতিবাদে রবিবার রাত থেকে ধর্নায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত থেকেই মেট্রো চ্যানেলে মমতার ধর্না মঞ্চের সামনে ভিড় জমান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। সোমবার সকালেও সেই ভিড় বজায় থেকেছে। সিবিআই হানার প্রতিবাদে সোমবার দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে মিছিল করবে তৃণমূল। কেন রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে চাইছে সিবিআই? কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক উচ্চপদস্থ কর্মচারী দাবি করলেন চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে পুলিশ কমিশনারের কাছে।
এই প্রসঙ্গে সিবিআই জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, "চিট ফান্ড কাণ্ডে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রমাণ আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। হতে পারে, সে সব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্তকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। চিট ফান্ড কাণ্ডের সঙ্গে যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের যোগ রয়েছে, সেটাকে খুঁজে বার করবই আমরা"।
আরও পড়ুন, Mamata Banerjee on Dharna Live Updates: রাতভর ধর্নায় মমতা, সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই
পশ্চিমবঙ্গের ভেতরে এবং বাইরে বহু প্রভাবশালী ব্যাক্তি এই চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, দাবি সিবিআই-এর। সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই বলে, কলকাতার নগরপাল চিটফান্ড দুর্নীতির তদন্তে তথ্য প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন। এরপরই দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘প্রমাণ দিন, কলকাতার সিপি তথ্য প্রমাণ নষ্ট করেছেন অথবা করতে পারেন। যদি প্রমাণ দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশকে ভবিষ্যতে দুঃখ করতে হবে।’’ এদিন রাজ্যের তরফে সওয়াল করেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে জয়ী কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙভি।
কে এই রাজীব কুমার?
কলকাতার ৩৯ তম নগরপাল রাজীব কুমার ১৯৮৯ ব্যাচের আইপিএস আধিকারিক। ২০১৬ সালে কলকাতার পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন রাজীব কুমার। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সুরজিত কর পুরকায়স্থ সিআইডি-তে চলে যাওয়ার পর তাঁর জায়গায় আসেন রাজীব কুমার। এর আগে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কলকাতা পুলিশের অধীনে স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের প্রধান ছিলেন রাজীব কুমার। ২০১৩ সালে সারদা এবং রোজভ্যালি মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দলের দায়িত্বে থাকার সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, রবিবার বিকেলে রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। যা ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশের সঙ্গে সিবিআইয়ের রীতিমতো ধস্তাধস্তি, বাদানুবাদ হয়। রাজীব কুমারের লাউডন স্ট্রিটের বাড়ি থেকে কয়েকজন সিবিআই আধিকারিককে জোর করে গাড়িতে তুলে শেক্সপিয়র সরণি থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
সিবিআই সূত্রে খবর, এর আগে বেশ কয়েকবার কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নোটিশ পাঠিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু তিনি হাজির হননি।
রবিবার যখন কলকাতায় তুলকালাম অবস্থা চলছে তখন সিজিও কমপ্লেক্সের চারদিকে ঘিরে ফেলে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। রবিবার সিজিও কমপ্লক্সে যেসব অফিস খোলা থাকে, সেখানকার অফিসকর্মীরা আটকে পড়েন।