ED-CBI: নির্বাচন এলেই বিরোধী দল-সহ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয় সিবিআই-ইডি। গত দুই বছর ধরে এই অভিযোগ বরাবর করে এসেছে বিজেপি-বিরোধী দলগুলো। এই আবহে এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার অধিকর্তাদের মেয়াদ বাড়াল মোদি সরকার। অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি করে দুই থেকে বাড়িয়ে ৫ বছর করা হয়েছে সিবিআই-ইডি অধিকর্তার মেয়াদ। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দিল্লি পুলিশ স্পেশাল এস্টাব্লিসমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৪৬-তে সংশোধনী এনে রবিবার এই বদল আনা হয়েছে। এদিন থেকেই কার্যকর হবে অধ্যাদেশ। যেহেতু এখনও কোনও সংসদের অধিবেশন নেই, তাই রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে এই অধ্যাদেশ কার্যকর করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এই রাজ্যের একাধিক মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি। পাশাপাশি ঋণ খেলাপি মামলায় ব্যাঙ্ক প্রতারণায় অভিযুক্ত মেহুল চোকসি, নীরব মোদি আর বিজয় মাল্যকে দেশে ফেরাতেও তৎপর এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাই কোনও তদন্তের গতি যাতে শ্লথ না হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। এমনটাই আইন মন্ত্রকের একটি সুত্রের খবর।
যদিও বিরোধীদের দাবি, ‘এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার অধিকর্তা নিয়োগে একাধিকবার মুখ পুড়েছে মোদি সরকারের। কোনও ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা অধিকর্তার মেয়াদ বৃদ্ধিতেও বিরোধিতার মুখে পড়েছে মোদি সরকার। সেই বিড়ম্বনা এড়াতেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত।‘ কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের আগেই একাধিকবার খবরের শিরোনামে এসেছে সিবিআই এবং ইডি।
এদিকে, শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ারের একাধিক সম্পত্তি সম্প্রতি বাজেয়াপ্ত করেছে আয়কর দফতর। মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর গোয়ার রিসোর্ট, চিনির কল, দিল্লির অভিজাত ফ্ল্যাট এবং দক্ষিণ মুম্বইয়ের নির্মল টাওয়ারের অফিস প্রাথমিক ভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পাওয়ার পরিবার সম্বন্ধীয় এই সম্পত্তিগুলোর বিরুদ্ধে বেনামি লেনদেন প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নিয়েছে আয়কর দফতর। গত মাসের ৭ অক্টোবর আয়কর দফতর অজিত পাওয়ারের ছেলের একটি সংস্থায় অভিযান চালায়। আয়কর দফতরের তদন্তে জানা গিয়েছে, উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বোনের নামে থাকা কয়েকটি সংস্থা, মহারাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চারটি চিনি কল এবং দুটি রিয়াল এস্টেট সংস্থা—এগুলো পরোক্ষে পাওয়ার পরিবারের নামে। সেই মাসেই ১৪ তারিখ আয়কর দফতর দাবি করেছিল, অজিত পাওয়ারের পরিবারের নামে থাকা বেহিসেবি প্রায় ১৮৪ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
এদিকে, এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নিয়েছে আয়কর দফতর, তখন অপর এক এনসিপি নেতা অনিল দেশমুখকে গ্রেফতার করেছে ইডি। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অর্থ তছরূপের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছিল ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা। সেই তদন্তের সুত্র ধরে ১২ ঘণ্টা ম্যারাথন জেরার পর গ্রেফতার দেশমুখ। আর্থিক দুর্নীতি এবং তছরুপের অভিযোগে সোমবার রাতে দেশমুখকে গ্রেফতার করে ইডি। যদিও আর্থিক তছরুপ এবং দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারের কথা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্র মারফত জানতে পেরেছে।
অপরদিকে, ঋণ খেলাপি মামলায় গ্রেফতারির একদিন পরেই জামিন পেলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ছেলে। গত সোমবার অশোক সইকিয়ার জামিন মঞ্জুর করেছে গুয়াহাটির বিশেষ সিবিআই আদালত। তাঁর বাবা হিতেশ্বর সইকিয়া অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। দাদা দেবব্রত সইকিয়া রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। কংগ্রেসি ঘরানার এহেন রাজনৈতিক পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তানকে গত রবিবার গ্রেফতার করে সিবিআই। অভিযোগ, সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ৯.৩৭ লক্ষ টাকার ঋণ খেলাপ করা। ১১৯৬ সালের এই ঘটনায় ১৯৯৮ সালে এফআইআর দায়ের করেন ওই ব্যাঙ্কের এক কর্মচারী।
যদিও পৃথক সমঝোতার মাধ্যমে সেই ঋণ পরিশোধ করেছেন তিনি। এই দাবি করেছিলেন অশোক সইকিয়া। এমনকি, সেই দাবির পক্ষে নথিও সামনে আনেন তিনি। পেশায় ব্যবসায়ী অশোক বলেন, ‘২০১১ সালে আমি ঋণ পরিশোধ করি। ২০১৫ সালে সেই অর্থ গ্রহণ করে ব্যাঙ্ক আমাকে শংসাপত্র দিয়েছে। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আমার থেকে ব্যাঙ্কের আর কিছু প্রাপ্য নেই।‘
তারপরেও অর্থহীন ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। বিবৃতিতে জানান অশোক। তিনি দাবি করেন, ‘আমার বাড়িতে গোয়েন্দারা আসবেন, এই সংক্রান্ত কোনও আগাম নোটিশ সিবিআই বা আদালত দেয়নি। একমাত্র রাজ্য সরকার এবং সিবিআই জানে, কেন আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।‘
এদিকে, ভাইয়ের জামিনের পর দেবব্রত সইকিয়া বলেন, ‘আমি আইনজীবীর মারফৎ খবর পাই ভাইয়ের জামিন হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ও বাড়ি চলে আসব। তখন বিষয়টা পুরো বলতে পারব।‘ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি আরও জানান, ভাই পলাতক ছিলেন না। বাড়িতেই ছিলেন। সেখানেই সিবিআই গোয়েন্দারা এসে তাঁকে বলে, আপনাকে যেতে হবে। আগাম কেউ কোনও খবর দেয়নি। তারপরেই গ্রেফতার করে। এই মামলার কোনও বৈধতা নেই।‘
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন