ইয়াস-সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোকে আর্থিক সাহায্য দেবে মোদি সরকার। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে এই অর্থ দেবে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন বিশেষ কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গিয়েছে, মোট ৩ হাজার ৬৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই অর্থ থেকে বাংলা পাবে ৫৮৬ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ গুজরাতের জন্য। পশ্চিমের এই রাজ্য পাবে ১ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা।
চলতি বছর মে মাসে বঙ্গোপসাগরে তৈরি ইয়াস ঝড়ে বিপর্যস্ত হয় বাংলা এবং ওড়িশা। তার পরেই আরব সাগরে তৈরি হওয়া তওকত ঝড়ে বিপর্যস্ত হয় দেশের দক্ষিণ- পশ্চিম উপকূল। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল গুজরাতে। পাশাপাশি অতি বৃষ্টির ফলে বন্যা, ভূমি ধসের জেরে ক্ষতি গ্রস্ত রাজ্যগুলো পাবে এই আর্থিক সাহায্য। সেই তালিকায় নাম আছে কর্নাটক, অসম, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরাখন্ড।
এদিকে, পুজোর মাসে ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গের একাধিক রাজ্য। বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সেই সময় কপ্টারে আরামবাগে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকা ঘুরে দেখে তাঁর তোপের মুখে ছিল DVC। কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ DVC-র জন্যই রাজ্যের একাংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘বছরে চারবার জল ছাড়ছে, এরকম চললে DVC-র কাছ থেকে ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে’, আরামবাগের কালীপুরে বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর সাফ জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টির জেরে সেখানকার ড্যামগুলি থেকে জল ছাড়া হয়। সেই জলেই বাংলার একাংশ ডোবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে প্রায় ৩ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে DVC-র মাইথন ও পাঞ্চেত ব্যারেজ থেকে। আমাদের না জানিয়েই জল ছেড়েছে DVC। রাজ্যের অনুনতি ছাড়াই জল ছাড়া হয়েছে। DVC-র জলে রাজ্যের ৮ জেলা প্লাবিত। সাড়ে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে DVC। উদয়নারায়ণপুর, আরামবাগ পুরসভা প্লাবিত হয়েছে। DVC ড্যাম ড্রেজিং করে না। বছরে চারবার জল ছাড়ছে। জুলাই মাসেও ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল। এরকম চললে এমন একদিন আসতে পারে যেদিন DVC-র কাছ ছেতে ক্ষতিপূরণ চাইতে হতে পারে।’
উল্লেখ্য, এবছর ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। সেই জলই এরাজ্যে সে সময় ছেড়েছে DVC। সেই জলেই বানভাসি রাজ্যের একাধিক জেলা। ঝাড়খণ্ডের ড্যামগুলি নিয়মিত পরিস্কার রাখা গেলে সেখানে আরও বেশি জল ধরে রাখা যাবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন, বন্যা পরিস্থিতির জেরে ১ লক্ষ বাড়ি নষ্ট হয়েছে। ৪ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮ কলাম সেনা নামানো হয়েছে। ৬ লক্ষ ত্রিপল পাঠানো হয়েছে।
পাশাপাশি আবারও ‘ম্যান মেড বন্যা’ তত্ত্ব তুলে ধরে রাজ্যের বানভাসি দশা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সাহায্য দেয় না বলেও অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে বহুবার ঘূর্ণি ঝড় বিধ্বস্ত বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মমতা। কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ক্ষোভ বাড়ছে, আমি চাই না ক্ষোভ বাড়ুক। ওরা কোনওদিন সাহায্য করে না। যা সাহায্য আমরাই করছি। আকাশপথে ভয়ঙ্কর ক্ষতির ছবি দেখেছি। আমাদের জলের টাকা তো জলেই চলে যাচ্ছে।’