শুক্রবার গভীর রাতে শর্তসাপেক্ষে শপস অ্যান্ড এস্ট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় গ্রামীণ এলাকা ও শহরাঞ্চলে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্র। শনিবার সকলা থেকেই সেই নির্দেশিকা ঘিরে চরম বিভ্রান্তি শুরু হয়। ওই দিন সকালেই আবার শুক্রবারের জারি করা নির্দেশিকা সংশোধন করে মোদী সরকার। কিন্তু তাতেও ধন্দ সম্পূর্ণ কাটেনি।
শুক্রবারের নির্দেশিকায় কেন্দ্র জানায়, শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শপস অ্যান্ড এস্ট্যাবলিশমেন্ট অ্যাক্টের রেজিস্ট্রিকৃত সব ধরনের দোকান চালু করা যাবে। আবাসন, বাজার, পুরসভা বা পুরনিগমের আওতার বাইরে থাকা দোকানগুলিকে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। পুর এলাকায় পাড়ার বিভিন্ন দোকান, একক দোকান মালিকরা দোকান খুলতে পারবেন। তবে মাল্টি-ব্র্যান্ড এবং শপিং মলগুলো এই ছাড়ের আওতার পড়বে না। এছাড়াও সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে, মাস্ক পরে ও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখেই কাজ করতে হবে। নির্দেশিকায় উল্লেখ, হটস্পট বা কমটেনমেন্ট জোন এই ছাড়ের আওতায় পড়বে না।
অর্থনীতিকে সচল রাখতেই এই ছাড়া বলে জানা যায়। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মত শনিবার সকাল থেকেই দোকান খুলতে শুরু করে। প্রশ্ন ওঠে যে, সেলুন বা সালোঁর মত দোকান খোলা থাকলে বিপদ কী বাড়বে না? কোন দোকান খোলা হবে তারও নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তারপরই সেলুন বা সালোঁকে ছাড়ের আওতা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানায়, পরিষেবামূলক কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে। কেবল জিনিস বিক্রি হয় এমন সব দোকানই শর্তসাপেক্ষে খোলা থাকবে।
এই ধরনের পদক্ষেপে বারে বারেই কেন্দ্রের অসচেতনতার বিষয়টিই প্রকট হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২৪ মার্চ প্রথম ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজ্যগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎই তা ঘোষণা করায় সমস্যা চরমে পৌঁছায়। খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান থেকে পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে রাজ্যগুলির বিভ্রান্তি বাড়ে। প্রথম পর্যায়ে লকডাউন বিধি ৬-বার সংশোধন করেছিল কেন্দ্র। দ্বিতীয় পর্যায়ের বিধিতে এখনও পর্যন্ত সংযোজন ও ব্যাখ্যার সংখ্যা সাত।
আরও পড়ুন- লকডাউনে শুধুমাত্র অত্য়াবশকীয় পণ্য বিক্রিতে ছাড় ই-কমার্স সংস্থায়, নির্দেশ কেন্দ্রের
১৫ই এপ্রিল দ্বিতীয় পর্য়ায়ের লকডাউন বিধির গাইডলাইন প্রকাশ পায়। ১৭ই এপ্রিল ছাড়েও আওতায় আনা হয় বণ্যঞ্চল কার্যকলাপকে। পাশাপাশি ছাড় দেওয়া হয় এনবিএফসি ও কোয়াপরেটিভ সোসাইটি, অপটিক্যাল ফাইবার বসলানোর মত কার্যকলাপকে। ছাড়ের আওতায় ছিল ই-কামার্সের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাইরে জিনিসও মানুষের কাছে পৌঁছানর বিষয়টি। তবে ১৯ এপ্রিল সেই ছাড় প্রত্যাহার করা হয়। জানা যায়, মুখে 'অসামঞ্জস্যতার' কথা বললেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চাপেই সেই ছাড় প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার। ২১ এপ্রিল স্কুলের বই-খাতার দোকান, বৈদ্যুতিন পাখা, শয্যারত বয়স্কদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান খোলার ঘোষণা করে।
এর আগে গ্রামীণ শিল্পাঞ্চলে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে কাজ সমসময় সম্ভব হচ্ছে না বলে কাজ শুরু করতে বেঁকে বলে শিল্পমহল। আলোচনাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এর আধিকারিকের কথায়, 'আরও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানো হয়তো যেত, কিন্তু সেটা আমাদের আওতাধীন নয়। সেটি বাণিজ্যমন্ত্রকের বিষয়। '
গাইডলাইন ঘিরে এর আগে কেরালার সঙ্গেও কেন্দ্রের বিরোধ তৈরি হয়। পরে অবশ্য কেরালা জানায় কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্যের অবস্থান এক। লকডাউন নির্দেশিকা ঘিরে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অভাবেই বারে বারে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে বলে মত বহু রাজ্যের।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন