কোথাও ট্রান্সফরমার থেকে তার ঝুলে রয়েছে, কোথাও ট্রাল্সফরমারের সামনের অংশ খোলা। এই শহরের এটি পুরনো গল্প। এ চিত্র সকলেরই চেনা, সবাই জানেন যে অসতর্ক হলেই ঘোর বিপদ, বিশেষ করে বর্ষাকালে। কিন্তু আবার বছর ঘুরে বর্ষা এলো, এবারও কোনও হেলদোল নেই পুরসভা বা সিইএসই-র। উলটে প্রতিবারের মতই তারা দায় এড়াতে ব্য়স্ত। একইসঙ্গে, শহরের একাধিক রাস্তায় ঝুলে রয়েছে ইলেকট্রিকের তার, সেই সব তার জট পাকিয়ে রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটির ওপর। অবশ্য এবিষয়ে CESC-র দাবি, এই তার তাদের নয়, সমস্তটাই কেবল অপারেটরদের কারসাজি।
বছর দুই আগে শহরে ত্রিফলা বাতির তারে হাত লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক কিশোরের। তারপরও কি হুঁশ ফিরেছে? রাস্তা সাজিয়ে তুলতে বাতিস্তম্ভের জয়েন্ট বক্স খুলে মূল তার থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়। তারপর বহু জায়গায় সেই জয়েন্ট বক্স খোলা অবস্থাতেই থেকে যায়। বিদ্যুৎবাহী তার খোলা অবস্থায় থাকলে তা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার নজির দেখা গিয়েছে শুধু গত বছরই নয়, এর আগেও বহুবার। এই শহরেই মহম্মদ আলি রোজা এবং আবদুল নাদিমের বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্য়ু হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল CESC-র তার খুলে পড়ে ছিল বর্ষার জমা জলে। এবং তাতেই ঘটে যায় বিপত্তি।
CESC সাফ জানিয়েছে, রাস্তার ধারে কেবলের তারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তারা দায়ী নয়। তাহলে প্রশ্ন, এই দায় কার? এসব দিকে চোখ পড়েও পড়েনি কলকাতা পুরসভার কর্তাদেরও। বিদ্যুৎবাহী কেবলও কিছু কিছু সময় আর্থিং এর কারণে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এই কেবলের সঙ্গে সংযোগ থাকে বিদ্যুতের খুঁটির। কেবল ছাড়াও শহরের একাধিক এলাকায় ট্রান্সফরমার বা বিদ্যুতের খুঁটির গায়ে জয়েন্ট বক্স খোলা অবস্থায় রয়েছে। বর্ষায় জলে বিপদ আরও বাড়তে পারে। যে কোনও সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
CESC সূত্রে খবর, ইতিমধ্য়ে তারা ফল্ট রিপেয়ারিং টিমের সঙ্গে মিটিং করেছে। জরুরী পরিষেবার ক্ষেত্রে আরও বেশি সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে। যদি কোনো সমস্যা থাকে জরুরি ভিত্তিতে তা ঠিক করা হবে। সাম্প্রতিক ঝড়বৃষ্টিতে বিদ্যুতের যে সমস্যাগুলি হয়েছিল তা বর্তমানে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
CESC-র আধিকারিক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, "কেবলের দায় আমাদের নয়। আমাদের আওতার সমস্ত তার শহরের মাটির নীচ দিয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে সচেতনতার প্রচারে নয়া পদক্ষেপ নিয়েছে CESC। এসএমএস এবং ইমেল মারফত গ্রাহকদের সচেতন করার পাশাপাশি এবার থেকে গাড়ি নিয়ে এলাকায় এলাকায় প্রচারে নামব আমরা।"
এদিকে কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়ের তোপ কলকাতা পুরসভার দিকে। তিনি বলেন, "দায় এড়ালে চলবে না। শুধু বর্ষায় নয়, সারা বছরই এদিকে নজর দেওয়া উচিত, যা দেওয়া হয় না।" এ বিষয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করলেও তিনি অধরাই রয়ে গিয়েছেন।