জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী গাড়ি বিস্ফোরণে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান মারা যাওয়ার পর দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয় যাতায়াতের সময়ে অসামরিক যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
রাজনাথ সিং একটি উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠকের পর জানান, "আপাতত কিছু দিনের জন্য সেনা এবং আধা সেনার কনভয় যাতায়াতের সময়ে অসামরিক যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এর ফলে হয়ত কিছু অসুবিধা হবে, তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু জওয়ানদের নিরাপত্তার জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি।"
আরও পড়ুন: চিন কেন আজহার মাসুদকে বাঁচাচ্ছে?
জম্মু থেকে কাশ্মীরের মধ্যে সড়ক পথে যাতায়াতে যান নিয়ন্ত্রিত হলে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত গাড়ি আটকে থাকতে পারে।
কীভাবে সড়কপথে যাতায়াত হয়
জম্মু-শ্রীনগর-উরি জাতীয় সড়ক ৩৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে দক্ষিণ কাশ্মীরের কাজিগন্ড থেকে উত্তর কাশ্মীরের উরি পর্যন্ত উপত্যকার দৈর্ঘ্য ১৭৫ কিলোমিটার। এ পথেই সবচেয়ে বেশি বিপদের আশঙ্কা রয়েছে নিরাপত্তা কর্মীদের। এই সড়কপথ গিয়েছে অনন্তনাগ, পুলওয়ামা, শ্রীনগর এবং বারামুল্লার মধ্যে দিয়ে। কাজিগন্ড থেকে শ্রীনগরের পার্শ্ববর্তী শহর নরবল পর্যন্ত ৮৫.৪ কিলোমিটারের চার লেনের সড়ক রয়েছে - যে পথ দিয়ে দু মুখেই গাড়ি যাতায়াত করতে পারে। এখানে রাস্তা ৩০ ফুট চওড়া। নরবল থেকে উরি পর্যন্ত ৯০.২ কিলোমিটার রাস্তার দৈর্ঘ্য, এ রাস্তা দুই লেনের।
শ্রীনগরের জাইনাকোটে লেহ্-এর দিকে একটি পৃথক রাস্তা চলে গিয়েছে। এটিও দু লেনের রাস্তা - জোজিলা পর্যন্ত এ পথের দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সড়কপথগুলি গ্রাম এবং আবাসিক কলোনি দিয়ে ঘেরা। গ্রামগুলির সঙ্গে মূল সড়ক যুক্ত হয়েছে পৃথক রাস্তার মাধ্যমে।
অসামরিক গাড়ি এবং সামরিক কনভয়
প্রতিদিন অন্তত চারটি নিরাপত্তাবাহিনীর কনভয় এ পথে যাতায়াত করে। দুটি যায় জম্মু থেকে কাশ্মীরের দিকে, দুটি কনভয় কাশ্মীর থেকে জম্মুর পথে। গ্রীষ্মকালে কনভয়ের যাতায়াত বেড়ে যায়। সে সময়ে লাদাখ এবং গুরেজ ও টাংধারের মত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির রাস্তা খুলে যায়। যদি অসামরিক গাড়ির যাতায়াত কনভয়ের যাতায়াতের সময়ে বন্ধ রাখা হয়, তাহলে উত্তর ও দক্ষিণ, উভয় মুখী সমস্ত রাস্তা অন্তত পাঁচঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।
সরকারি হিসেবে, প্রতি ঘণ্টায় এই সড়কপথে ৯,৫০০ গাড়ি যাতায়াত করে। এর মধ্যে আন্দাজ ৫,০০০ হালকা গাড়ি রয়েছে। এক বরিষ্ঠ ট্রাফিক আধিকারিক জানিয়েছেন, "দক্ষিণের দিকে কনভয়ের যাতায়াতের সময়ে অসামরিক গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষাকৃত সহজ। একটি লেন দিয়ে কনভয় গেলে, অন্য লেন দিয়ে দুদিকেই অসামরিক গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা আমরা করতে পারব। কিন্তু নরবল থেকে উরি পর্যন্ত রাস্তায় দুদিকের লেনই গাড়ি চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়।" তিনি বলেন, "আমরা যদি শুধু এক ঘণ্টার জন্য বারামুল্লা থেকে নরবলের ট্রাফিক আটকে দিই, তাহলে ৫,০০০ গাড়ি আটকে পড়বে। সে জ্যাম ছাড়াতে বহু সময় লেগে যাবে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে হাইওয়েতে আসা প্রতিটি গাড়িকে আটকানোও কঠিন কাজ হবে।" কনভয় ছাড়াও নিরাপত্তাবাহিনীর গাড়ি সারা দিন ধরেই দুই দিকে যাতায়াত করে।
আরও পড়ুন: সংবিধানের কলঙ্কিত রক্ষক
আর কোনও উপায় আছে?
নিরাপত্তাবাহিনী যদি জম্মু থেকে কাশ্মীরে আকাশপথে যাতায়াত করে, তাহলে সময় অনেক কম লাগবে। ১০ ঘণ্টার জায়গায় আধ ঘণ্টা। কিন্তু খরচ অনেক বেড়ে যাবে। যদি তেমনটা ঘটেও তাহলেও শ্রীনগর থেকে দক্ষিণ এবং উত্তর কাশ্মীরে কনভয় পাঠাতেই হবে।
আরেকটি উপায় হল রেলপথ। এখন জম্মুর বানিহাল থেকে কাশ্মীরের বারামুল্লা পর্যন্ত আট কামরার ট্রেন যাতায়াত করে। ট্রেনে যাতায়াতে সময় অনেকটা কম লাগবে তো বটেই, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সে রাস্তা অধিকতর নিরাপদও বটে। শুধু নিরাপত্তাবাহিনীকে সম্ভাব্য অন্তর্ঘাত এড়াতে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দিনের বেলা জম্মু-শ্রীনগর-বারামুল্লা সড়কে পাহারা দেয় ২২ কোম্পানি সিআরপিএফ।
Read the Full Story in English