তুঙ্গে জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্ক। তার মধ্যেই আগুনে ঘি ছালল নিউ হরাইজন পাবলিক স্কুল। মসজিদের বদলে জ্ঞানবাপী মন্দির লিখে গুগল মানচিত্রে অনুসন্ধানের আর্জি জানিয়েছে এই স্কুল। প্রত্যেক প্রাক্তনীর কাছে ই-মেলে এই আবেদন করা হয়েছে। যা নিয়ে শোরগোল পড়তেই ঢোক গিলেছে ওই নামজাদা স্কুলের কর্তৃপক্ষ। জানিয়েছে যে, উপযুক্ত স্ক্রিনিং পদ্ধতি ছাড়াই প্রাক্তনীদের কাছে ই-মেইল গিয়েছিল।
নিউ হরাইজন পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষের পাঠানো ই-মেইলে লেখা হয়েছিল, 'সবার কাছে অনুরোধ দয়া করে গুগল মানচিত্রে জ্ঞাবাপী মসজিদের পরিবর্তে জ্ঞানবাপি মন্দির হিসেবে আপডেট করুন। আপনার সঙ্গেই আমাদের হিন্দু ভাই ও বোনদের এটি করতে বলুন যতক্ষণ না গুগল এই পরিবর্তনগুলি আপডেট করে। দয়া করে গুগল মানচিত্র খুলুন। জ্ঞানবাপী মন্দিরের জন্য অনুসন্ধান করুন, যদিও আপনি সেটি জ্ঞানবাপী মসজিদ হিসাবে দেখতে পাবেন। তখন সেটি সম্পাদনা করার পরামর্শ দিন। টাচ অন অপশনে গিয়ে নাম পরিবর্তন করুন বা অন্যান্য বিবরণে জ্ঞানবাপী মন্দির এবং হিন্দু মন্দির হিসাবে উল্লেখ করুন।'
এই স্কুলেরই এক প্রাক্তনী বর্তমানে আমেরিকার হাওয়াই নিবাসী প্রীতি কৃষ্ণমূর্তি জানিয়েছেন যে, চলতি মাসের ২০ তারিখ বিতর্কিত ই-মেলটি তিনি পেয়েছিলেন৷ তারপরই নিয়েজের স্কুলের "অদ্ভূত" আচরণ প্রকাশ করতে সোশাল মিডিয়ায় তা তুলে ধরেন৷ পীতির কথায়, 'আমি যখন ই-মেলটি পাওয়ার পরই হতবাক হয়ে যাই, কারণ এটি আমার স্কুল থেকেই শুধু পাঠানো হয়নি বরং একটি স্কুলের দ্বারা এই ধরনের ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল বলে। একটি স্কুল পড়ুয়াদের সব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে শেখায়, উপস্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখানো হয় যাতে পড়ুয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিত্ব গঠন হয়। যে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মুক্ত চিন্তার জায়গা হওয়া উচিত, ওই ই-মেলের মাধ্যমে স্কুল বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে চিন্তাহীন আনুগত্যে মগজ ধোলাই করতে শাখাচ্ছে।'
বিতর্ক মাথাচাড় দিতেই নড়েচড়ে বসে নিউ হরাইজন পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের তরফে বলা হয়, 'কিছু ধর্মীয় অনুভূতিকে অসম্মান করার বিষয় নিয়ে পাঠানো ই-মেলের প্রতিবেদনগুলি আমাদের নজরে এসেছে এবং বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেখা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, ই-মেলটি সঠিক স্ক্রীনিং পদ্ধতি ছাড়াই পাঠানো হয়েছিল। আমরা ভারতের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্যের জন্য গর্ব করি, আমরা আমাদের স্কুলে যা কিছু করি তার সঙ্গে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের অনুশীলন করি।'
প্রাক্তনী কৃষ্ণমূর্তির দাবি, 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' প্রকাশের সময় নিউ হরাইজন পাবলিক স্কুল ই-মেলে একই ধরণের আর্জিই পাঠিয়েছিল। ই-মেলটিতে প্রাক্তন ছাত্রদের সিনেমাটি দেখার কথা বলা হয়েছিল। সেখানে সিনেমার কিছু ঘটনা এবং চরিত্রকে মহাভারতের চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়।' স্কুলের তরফে বছরে মাত্র ৩-৪টি নিউজলেটার প্রাক্তনীদের কাছে পাঠানো হয়। বেশিরভাগ নিউজলেটার স্কুলে ঘটে যাওয়া সভা এবং ঘটনাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র বলেছেন, জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কের ই-মেলটি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে বিরক্ত করেছে। দ্য কাশ্মীর ফাইলস-এ প্রথম ই-মেলটি খুব অদ্ভুত ছিল এবং আমি হতবাক এই দেখে যে স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি সিনেমার প্রচার করছে। মসজিদ সংক্রান্ত দ্বিতীয় ই-মেলটি খুবই বিরক্তিকর ছিল। আজান ও হালাল নিয়ে বিতর্কের পর সংবাদ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম, এখন এই ঘটনা আমাকে আরও বিচলিত করেছে। আমি নিউজলেটার মেম্বারশিপ ত্যাগ করেছি। এই ঘটনার পর আমার স্কুলের অনেক স্মৃতি এখ ঝাপসা। আমি হতাশ বোধ করছি।'
কোথানুর থানার পুলিশ আধিকারিকদের বয়ান অনুযায়ী, স্কুল কত্রৃপক্ষ দাবি করেছে যে- একটি ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে এবং চিঠিটি বিভিন্ন গ্রুপে প্রচার করা হচ্ছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশে যোগাযোগ করা হয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি।
Read in English