অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন দিল্লি সরকার ২০১২ সালের গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তিন অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়া সুপ্রিম কোর্টে্র আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে পিটিশন দায়ের করবে। দিল্লি সরকার লেফটান্যান্ট গর্ভনর সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দায়ের করার অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। দিল্লির লেফটান্যান্ট গর্ভনর বিনাই কুমার সাক্সেনা সোমবার চাওলা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিলের অনুমোদন দিয়েছেন। দিল্লি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা এবং এডিএল এসজি নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। গত ৭ নভেম্বর গণধর্ষণ-খুন মামলায় তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
বিজেপি সাংসদ অনিল বালুনি বৃহস্পতিবার ২০১২ সালের চাওলা গণধর্ষণ শিকার হওয়া মেয়েটির মা-বাবার সঙ্গে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে এই মামলায় একটি পর্যালোচনা পিটিশন দায়ের করার অনুরোধ করেছিলেন। অনিল বালুনি উত্তরাখণ্ডের রাজ্যসভার সাংসদ। তার বাবা-মা দিল্লির লেফটান্যান্ট গর্ভনর বিনাই কুমার সাক্সেনার কাছে বলেন যে তারা তিন অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড চান। সূত্রের খবর মামলার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা এবং অতিরিক্ত সলিসিটার ঐশ্বরিয়া ভাটির নিয়োগও লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনুমোদন করেন।
এরপর তিনজনই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ডিএনএ রিপোর্ট ও অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের সাহায্যে তিনজনের বিরুদ্ধেই বিচারিক আদালতে মামলাটি অবিসংবাদিতভাবে প্রমাণিত হয়। এর আগে ২০১৪ সালে, নিম্ন আদালত মামলাটিকে 'বিরলতম' বলে বিবেচনা করে তিনজনকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। পরে দিল্লি হাইকোর্টও এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। একই সঙ্গে তিনজনকেই মুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
২০১২ সালে ছাওলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। তিন যুবক ওই এলাকায় বসবাসকারী ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে গাড়ি থেকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করার পর তার চোখে অ্যাসিড ঢেলে হত্যা করে। ঘটনাটি ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির। মেয়েটি কাজ সেরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিল। সেসময় পথে তিন যুবক তাকে গাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে চোখে অ্যাসিড ঢেলে তাকে হত্যা করা। পরিবারের লোকজন থানায় মেয়েটির নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করে।
পুলিশ অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পারে তিন যুবক নির্যাতিতাকে গাড়িতে তুলে অপহরণ করে। কয়েকদিন পরে, পুলিশ এই মামলার তিন অভিযুক্ত রবি কুমার, রাহুল এবং বিনোদকে গ্রেফতার করে। তদন্তে জানা যায়, মেয়েটিকে অপহরণের পর অভিযুক্তরা গণধর্ষণ করেছে। এ সময় তাকে গাড়িতে থাকা সরঞ্জাম দিয়ে মারধর করা হয়।
পাশাপাশি সিগারেটের ছ্যাঁকায় তরুণীর শরীরের একাংশ পুড়িয়েও দেওয়া হয়। মেয়েটি বাঁধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েটির দুই চোখে অ্যাসিড ঢেলে তাকে হত্যা করে অভিযুক্তরা। এই মামলায় নিম্ন আদালত ও দিল্লি হাইকোর্ট তিন অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে অভিযুক্তের আইনজীবী। সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে বহাল না রেখে তিন অভিযুক্তকে মুক্তি দেয়।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ২০১২ দিল্লি গণধর্ষণ-হত্যার অভিযুক্তদের মুক্তির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছিল, ঘটনার তিন দিন পর তরুণীর বিকৃত লাশ উদ্ধার করায় প্রসিকিউশন যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি। শরীরে গভীর ক্ষত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তিন আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে নিম্ন আদালত। যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে দিল্লি সরকার।
সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে জানায় অভিযুক্তদের ন্যায্য বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ট্রায়াল কোর্টের রায় সম্পর্কে মন্তব্য করে এতে বলা হয়, আদালত শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কোন ধরনের বাহ্যিক নৈতিক চাপে প্রভাবিত না হয়ে আদালতে প্রতিটি মামলার বিচার মেধা ও আইন মেনে কঠোরভাবে করতে হবে।