বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএর রাষ্ট্রপতি প্রার্থী আদিবাসী দ্রৌপদী মুর্মুতে কার্যত কুপোকাত কংগ্রেস। বিশেষ করে আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে। এ যেন শাঁখের করাত। প্রার্থী সাঁওতাল হলেও প্রাণখুলে সমর্থন তো করা যাচ্ছেই না, আবার প্রকাশ্যে মুর্মুর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে পারছেন না হাত শিবিরের রাজ্য নেতারা। তবুও বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে পাল্টা কৌশল খুঁজছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি।
জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট বা এনডিএ রাষ্ট্রপতি পদের জন্য দ্রৌপদী মুর্মুকে বেছে নিয়েছে। দ্রৌপদ ওড়িশার একজন সাঁওতাল আদিবাসী মহিলা। অঙ্কের হিসাবে তাঁর জয় কার্যত সময়ের অপেক্ষা। তিনি হতে চলেছেন দেশের সর্বপ্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি। দ্রৌপদী মুর্মুকে রাইসিনায় পাঠিয়ে দেশের উপজাতী, দলিত সহ নিম্নবর্গদেরই প্রাধান্য দেওয়া হল বলে দাবি গেরুয়া শিবিরের। সেটাই আপাতত তুলে ধরছেন ছত্তিশগড়ের বিজেপি নেতারা। এই রাজ্যে পদ্মের নেতা ধর্মলাল কৌশিকের মতে, মুর্মুর মতো একজন দক্ষ আদিবাসী নেতাকে বেছে নেওয়ার জন্য জাতীয় নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানাব।
আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডের জোট সরকারের প্রধান শরিক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা শুরুতেই দ্রৌপদীকে রাষ্ট্রপতির দৌড়ে স্বাগত জানিয়েছিল। প্রতিবেশী রাজ্য ছত্তিশগড়ের জনতা কংগ্রেস ছত্তিশগড়ের (জোগি) নেতা অমিত যোগীও মুর্মুকে তার সমর্থন জানিয়েছেন। অমিতের দাবি, তাঁর বাবা তথা ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগীও মুর্মুকে "সম্মান" করতেন। অমিত যোগীর কথায়, 'ছত্তিশগড় একটি উপজাতি অধ্যুষিত রাজ্য, তাই আমি ছত্তিশগড়ের সমস্ত বিধায়ককে উপজাতীদের সম্মান বজায় রাখার জন্য মুর্মুকে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। প্রয়োজনে দলের লাইনের ঊর্ধ্বে উঠে ভোট দিন।'
আদিবাসী ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি ভোটের আগে এনডিএ প্রার্থীকে কাউন্টার করতে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ডে বেশ চাপে সনিয়া-রাহুলের দল।
কঠিন কাজ। জানেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বাঘেল। তবুও জমি ছাড়তে নারাজ তিনি। উল্টে নিজের রাজ্যের অন্য এক আদিবাসী নেতার উদাহরণ তুলে বিজেপিকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন বাঘেল। তিনি বলছেন, 'বিজেপি উপেক্ষা করেছে (অনুসুইয়া) উইকে। তিনি একজন আদিবাসী নেতা। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে তার অতীত জড়িয়ে থাকার কারণেই উইয়েকে সঠিক সম্মান দিল না এনডিএ।' অনুসুইয়া ইউয়ে আদিবাসী আন্দোলনের অগ্রগণ্য নেতা এবং ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল ছিলেন।
রাজ্য বিজেপিমুখ্যমন্ত্রী দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। পদ্মের দাবি, একাধিক নামের মতো উইকের নামও বিবেচনায় ছিল।
বাঘেল তাঁর মতো করে যুক্তি সাজালেও ছত্তিশগড়ের কংগ্রেসের নেতারা, বিশেষ করে এর আদিবাসী বিধায়করা স্বীকার করেছেন যে দ্রৌপদী মুর্মুকে উপেক্ষা করা তাঁদের পক্ষে সহজ নয় এবং তাঁরা রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে উপজাতীয় সংগঠনে মারফৎ চাপে রয়েছেন। উল্লেখ্য ছত্তিশগড়ের আদিবাসী সমাজ তাঁদের নানা অধিকারের দাবি আদায়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জোট গড়ে আন্দোলনও চালাচ্ছে। গত ১৪ মার্চ, আধিবাসীদের জোট সংগঠন বিভিন্ন ইস্যুতে ২০ দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের বাড়ি ঘেরাও করেছিল। আসন্ন ভোটে এই জোট প্রার্তী দিতে পারে বলেও খবর।
ছত্তশগড় সরকারের অভ্যন্তরে একটি সূত্র বলেছে যে, একজন উপজাতি প্রার্থীকে সমর্থন না করায় রাজ্যের কংগ্রেস সরকার আদিবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারে।ফলে লাভ হবে বিজেপিরই।