অপহরণের এক সপ্তাহ পর ছত্তীসগড়ের সাব-ইঞ্জিনিয়ারকে মুক্তি দিল মাওবাদীরা। ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী, স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ও গ্রামবাসীদের সামনেই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। অজয় রোশন লাকরা নামে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে মুক্তির জন্য মাওবাদীদের কাছে একাধিকবার আবেদন জানান তাঁর স্ত্রী। স্থানীয় সাংবাদিকরাও এক্ষেত্রে বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শেষমেশ ছত্তীসগড়ের বীজাপুরে অপহৃত ওই ইঞ্জিনিয়ারকে মুক্তি দেয় মাওবাদীরা।
ছত্তীসগড়ের বীজাপুরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অজয় রোশন লাকরা। সপ্তাহ খানেক আগে মাওবাদীরা তাঁকে অপহরণ করে। অপহরণের পর থেকেই দিশেহারা হয়ে পড়ে তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের পরিবার। তাঁর স্ত্রী স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে মাওবাদীদের কাছে স্বামীর মুক্তির আবেদন করেন। বীজপুর জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ওই সাংবাদিককে অপহরণ করা হলেও সরকারিভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তরুণ ওই ইঞ্জিনিয়ারের মুক্তির পিছনে স্থানীয় সাংবাদিকদের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
জানা গিয়েছে, গত ১১ নভেম্বর পেশায় সাব ইঞ্জিনিয়ার অজয় রোশন লাকরাকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। বীজাপুরের মানকোলি পঞ্চায়েতের গোর্না গ্রামে নির্মীয়মাণ রাস্তার কাজ দেখতে গিয়েছিলেন অজয়। সেখান থেকেই তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে থাকা পেশায় পিওন লক্ষ্মণ প্রতাগিরিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। অহরণের পরের দিনেই প্রতাগিরিকে মুক্তি দেয় মাওবাদীরা।
তবে লাকরাকে এতদিন ছাড়েনি তারা। গত এক সপ্তাহ ধরে স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় মরণপণ সংগ্রাম চালিয়েছিলেন অজয়ের স্ত্রী অর্পিতা। ৩ বছেরর সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই মানকোলি এলাকায় পৌঁছে যান অর্পিতা। সুকমা ও বীজাপুরের সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই মাওবাদী নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা শুরু হয় তাঁর। স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার কাতর আবেদন জানান তরুণী।
লাকরা একজন সরকারি কর্মচারী, তিনি ঠিকাদার নন। মাওবাদীরা তাঁকে বিশ্বাস করতেই পারে, সাংবাদিকদের মাধ্যমে মাওবাদী নেতাদের বারবার একথা বুঝিয়েছেন পহৃত ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী। স্থানীয় সাংবাদিক গণেশ মিশ্র বলেন,“আমরা তাঁর আইডি কার্ড, তাঁর স্ত্রীর বিবৃতি এবং অন্যান্য সমস্ত বিবরণ মাওবাদীদের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট হননি।” এদিকে, লাকরাকে মুক্তি দেওয়া উচিত হবে কিনা তা নিয়ে মাওবাদীরা জনশুনানি করবে বলে খবর পায় তাঁর পরিবার। বুধবার বীজাপুর এবং সুকমা জেলার সীমানার একটি এলাকায় ওই জনশুনানি হবে বলে খবর মেলে। সেই শুনানিতেই লাকরাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- শীতের পথে কাঁটা নিম্নচাপ, সপ্তাহ শেষেই চড়বে পারদ
সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ওই ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী অর্পিতা বলেন, “আমি তাঁদের বলেছিলাম যে আমার স্বামী শুধুমাত্র নিজের চাকরি করতেই গিয়েছিলেন। আমার স্বামীর মুক্তির পিছনে যাঁরা সাহায্য করেছেন তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা লাকরার মুক্তির সঙ্গে জড়িত সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সূত্র মারফত জানা গগিয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার অপহরণের পরেও সরকারিভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা বলেন, “আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল লাকরাকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। বর্তমানে তাঁর শারীরিক কিছু পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এর পরে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ করব।”
Read full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন