বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করে ছেলে কার্তির ব্যবসায়ে সাহায্য করার জন্য পিটার মুখার্জিকে বলেছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। আইএনএক্স মিডিয়ার এফআইপিবি ছাড়পত্রের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার বিনিময়ে এ সাহায্য চেয়েছিলেন তিনি। তদন্তকারী সংস্থার কাছে এ দাবি করেছেন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়।
চিদাম্বরম ও তাঁর ছেলে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের দেওয়া খবর অনুসারে ইডি বলেছে পিটার ও ইন্দ্রাণী চিদাম্বরমের সঙ্গে তাঁর দিল্লির নর্থ ব্লকের অফিসে দেখা করেছিলেন।
"বিদেশি বিনিয়োগ আনার ব্যাপারে আইএনএক্স মিডিয়ার আবেদনের কথা তুলে পিটার পি চিদাম্বরমের সঙ্গে কথা শুরু করে এবং আবেদনের কপি চিদাম্বরমের হাতে তুলে দেয়।"
বিবৃতিতে ইন্দ্রাণী বলেছেন, "বিষয়টি বুঝে নেওয়ার পর পি চিদাম্বরম এফআইপিবি ছাড়পত্রের বিনিমেয় ছেলে কার্তির ব্যবসায়ে সাহায্য করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগ এনে দিতে বলেন।" এই বিবৃতি সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের কাছে রয়েছে।
আরও পড়ুন, টাইমলাইন: আইএনএক্স মিডিয়ায় কীভাবে জড়ালেন চিদাম্বরম
বর্তমানে বিচ্ছিন্ন দম্পতি আইএনএক্স মিডিয়া গোষ্ঠর কর্ণধার ছিলেন। এখন তাঁদের বিরুদ্ধে মেয়ে শিনা বরা হত্যার অভিযোগে মামলা চলছে।
ইন্দ্রাণী বলেছেন, এফআইপিবি-র ছাড়পত্রে অনুমতি নিয়ে বেনিয়মের কথা জানার পর ২০০৮ সালে তাঁরা চিদাম্বরমের সঙ্গে তেখা করার কথা স্থির করেন।
তিনি বলেন, "পিটার বলেছিল এফআইপিবি নিয়ে যা সমস্যা হচ্ছে সেসব কার্তি চিদাম্বরমের সাহায্যে এবং পরামর্শে ঠিক হয়ে যাবে।"
এর পর কার্তির সঙ্গে তাঁরা দিল্লির এক হোটেলে দেখা করেন বলে জানিয়েছেন ইন্দ্রাণী।
তিনি বলেন, "কার্তি বিষয়টি জানত এবং বলেছিল এ বিষয়টা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য দশ মিলিয়ন ডলার তাঁর বা তাঁর কোনও সহযোগীর বিদেশি একটি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা সম্ভব কিনা। পিচার যখন জানান বিদেশে ট্রান্সফার সম্ভব নয়, তখন কার্তি চেস ম্যানেজমেন্ট ও অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিক নামের অন্য দুটি কোম্পানির কথা বলেন, যাদের অ্যাকাউন্টে অর্থ দেওয়া যেতে পারে। কার্তি বলেন এই সংস্থাগুলি আইএনএক্স মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডর পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচয় দেবে।"
তবে বিবৃতিতে ইন্দ্রাণী বলেছেন পেমেন্টের বিষয়টি পিটারই দেখতেন। তিনি জানেননা যে চিদাম্বরমের ছেলেকে কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছিল।
ইন্দ্রাণী বলেছেন আইএনএক্স গোষ্ঠীর এক কর্তা কার্তির কোম্পানি চেস ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে এফআইপিবি সম্পর্কিত বিষয়ের জন্য যোগোযোগ রেখে চলত এবং তাঁর জানামতে কার্তির আরেক সংস্থা অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিক কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেড আইএনএক্স গোষ্ঠীকে কখনও কোনও পরিষেবা দেয়নি।
ইডির তদন্তে দেখা গিয়েছে আইএনএক্স মিডিয়া ২০০৮ সালে একটি চেকের মাধ্যমে অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিককে ৯.৯৬ লক্ষ টাকা দিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ এফআইপিবি ছাড়পত্র পাইয়ে দেবার বিনিময়েই এই টাকা দেওয়া হয়েছিল।
পিটার নিজের বিবৃতিতে বলেছেন তিনি চিদাম্বরমের সঙ্গে দুতিন বার দেখা করেছিলেন এবং প্রতিবারেই তা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎকার।
তবে তিনি এও বলেছেন, "চিদাম্বরম তাঁকে বলেন আইএনএক্সের আবেদনে বিলম্বের কোনও ব্যাপার নেই, তবে একই সঙ্গে সুযোগ এলে কার্তির ব্যবসায়ে তাঁকে বিদেশি অর্থ লগ্নির ব্যাপারটি যেন পিটার মাথায় রাখেন।"
নিজের বিবৃতিতে পিটার বলেছেন, "নিজের স্ত্রী ও আরও একজনকে সঙ্গে নিয়ে হায়াত দিল্লিতে কার্তির সঙ্গে দেখা করেন তিনি।"
এফডিআইয়ে অতিরিক্ত লগ্নির বিষয়টিকে ঠিক করাই ছিল এর উদ্দেশ্য।
এফআইপিবি-র র নতুন ছাড়পত্র পাওয়া এবং ওই বিষয়টি ঠিকঠাক করার জন্যই কার্তির সঙ্গে সক্ষাতের কারণ বলে জানিয়েছেন পিটার। কার্তি বিনিময়ে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবি করেন। তাঁকে যখন জানানো হয়, এই অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়, তখন কার্তি বলেন, তাঁর কোম্পানির মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া যেতে পারে।
আইএনএক্স মিডিয়া অ্যাডভান্টেজ স্ট্র্যাটেজিককে যে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছে তা ওই ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরই অংশ বলে জানিয়েছেন পিটার।
Read the Full Story in English