করোনা অতিমারীর জেরে দেশজুড়ে লকডাউন লাগু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তমূলক প্রতিবেদনে উঠে আসছে, লকডাউনের সময়কালে কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। পরিবারগুলিকে গ্রাস করেছে দারিদ্র। ফলে বেড়েছে শিশুপাচার। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী শিশুকে বেআইনি শ্রমে বাধ্য করা বা বিয়ে দিয়ে দেওয়ার মত ঘটনাও।
নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রকের চালু করা চাইল্ড হেল্পলাইন নম্বর ১০৯৮-এ ফোন এসেছিল ২৭ লক্ষ। সেই নম্বরে ফোন পেয়ে ত্রাণকর্মীরা ১ লাখ ৯২ হাজারটি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেন। গতবছর একই সময়ে হস্তক্ষেপের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৭০ হাজার।
গত পাঁচ মাসের মধ্যে ১০ হাজার বাল্যবিবাহের কথা জানতে পেরেছেন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের আধিকারিকরা। প্রতি রাজ্যে ৫০ শতাংশ পুলিশ ডিস্ট্রিক্টে অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট থাকতে হবে- কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকায় তার উল্লেখ থাকলেও উত্তরপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে তা কল্পনাতীত।
'শিশু-তরুণরা সহজেই অপরাধীদের ফাঁদে পড়ে যায়। তারা একবার পাচার হয়ে গেলে নানাভাবে অন্যায়ের শিকার হয়। অনেককে দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানো হয়। অনেককে ভিক্ষা করতে বাধ্য হতে হয়। অনেকেই আবার জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়।' গত ৬ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে বিভিন্ন রাজ্যগুলির কাছে আবেদন জানিয়েসতর্ক করা হয়।
চাইল্ডলাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের যে ত্রাণকর্মীরা পাচার হওয়া শিশুদের উদ্ধার করেছেন, তাঁরা নানা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। তাঁরা জানিয়েছেন, রাজস্থানের তিনটি বাস থেকে ১০ টি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা পাচার হয়ে যাচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গে একটি ১৫ বছরের মেয়ে বিয়ে করবে না বলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে বেঁচে ওঠে। তখন তাকে ফের বিয়ে দেওয়া হয়। চাইল্ড লাইন নম্বরে ক্রমবর্ধমান আবেদনের নিরিখেই সতর্ক করা হয় রাজ্যসমুহকে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বেশ চাইল্ডলাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের কয়েকজন ত্রাণকর্মী বা শিশুদের উদ্ধারকারীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁদের অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর। তাঁরা জানিয়েছেন, রাজস্থানের তিনটি বাস থেকে ১০ জন শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তারা পাচার হয়ে যাচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গে একটি ১৫ বছরের মেয়ে বিয়ে করবে না বলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে বেঁচে ওঠে। তখন তাকে ফের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কৃষ্ণচন্দ্রপুরের ঘটনা। কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের হেডমাস্টার এবং পাচার বিরোধী আন্দোলনকারী চন্দন মাইতির কথায়, তিনি ক্লাস নাইনের একটি মেয়ের কথা জানেন, যে তার সহপাঠীকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় তার বর ১৬০ টাকা রোজ মজুরিতে ইলিশ মাছ ধরতে যায়। নৌকা উল্টে সে নিখোঁজ হয়। নিয়মমতো মেয়েটিকে সাত বছর সাদা থান পড়ে বিধবার বেশ ধারণ করতে হত। রোজ প্রার্থনা করতে হত যাতে তার স্বামী ফিরে আসে। চন্দন মাইতি সংশ্লিষ্ট দু’টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মেয়েটি ফের স্কুলে আসা শুরু করে।
লকডাউনে জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল। সেই সুযোগেই শিশু পাচার, বাল্য বিবাহের মত ঘটনা বেশি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আগামী কয়েকমাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। কলকারখানা খুলেছে। এই সময়ই সস্তায় শ্রমিকের প্রয়োজন। তাই শিশু শ্রম বাড়তে বলে আশঙ্কা।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন