নভেল করোনাভাইরাস দাপট সম্পর্কে জানুয়ারি মাসেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-কে জানায় চিন। করোনাভাইরাসের জিনগত কাঠামো 'অবিলম্বে' প্রকাশ করার জন্য সেই সময় শি জিনপিংয়ের দেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিল হু। বিশেষভাবে ধন্যবাদও জানান হয়েছিল। কিন্তু ছ'মাসের মাথায় সংবাদ সংস্থার খবরের দৌলতে প্রকাশ পেল এক চাঞ্চল্যকর খবর। আর এতেই সুর বদল হু-র।
দেখা যায় চিনের পক্ষ থেকে যখন নভেল করোনাভাইরাসের জেনেটিক ম্যাপ প্রকাশ করা হয় তার কয়েক সপ্তাহ আগেই বহু সরকারি ল্যাব ভাইরাসটির জেনেটিক ম্যাপ আবিষ্কার করে ফেলেছিল।অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) সংস্থা আভ্যন্তরীণ নথি, মেইল এবং একাধিক সাক্ষাৎকার থেকে জানতে পারে যে চিনের জনস্বাস্থ্যবিভাগের তরফে সম্পূর্ণভাবে বারণ করা হয়েছিল এই ভাইরাসের টেস্ট, ওষুধ এবং ভ্যাকসিনের বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ না করতে।
জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ সে দেশের একটি ল্যাব করোনাভাইরাসের জিনোম ভাইরোলজির একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার পর খানিক বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা কোভিদ-১৯ এর জিনোম কাঠামো সরকারিভাবে প্রকাশ করে। এমনকী এও জানা গিয়েছে যে হু-র কাছে গোটা বিষয়ের প্রয়োজনীয় তথ্য জানান হয়েছিল আরও দু'সপ্তাহ পর। রাষ্ট্রসংঘের একাধিক আভ্যন্তরীণ মিটিংয়ের রেকর্ডিং থেকে বিষয়টি জানা গিয়েছে। এও জানা যায় সেই সময় জনসমক্ষে চিনের প্রশংসা করলেও হু জানত যে চিন তাঁদের সব তথ্য জানাচ্ছে না।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে করোনাকে মহামারী না বলে তখনই অতিমারী বলা হল যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আর্থিক অনুদান দেওয়া বন্ধ করলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল তলে তলে হু চিনের সঙ্গে রয়েছে এবং করোনাভাইরাসের প্রভাব লুকোনোর চেষ্টা করছে। যদিও চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানিয়েছেন যে তারা অত্যন্ত 'সময়োচিত পদ্ধতি'তেই বিশ্বকে সব তথ্য দিয়ে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে সংবাদসংস্থার মাধ্যমে যে চিত্র সামনে এসেছে সেখানে কোনও বক্তব্যই সমর্থনযোগ্য হচ্ছে না বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে নিজেরাই অন্ধকারে ছিলেন। তার কারণ অবশ্য চিনের কাছ থেকে পাওয়া স্বল্প তথ্য। সংবাদসংস্থা জানতে পারে হু-র আধিকারিকরা চিনের কর্তৃপক্ষকে চটাতে চাননি। তাঁরা চেয়েছিলেন চিনের কাজের প্রশংসা করে বিজ্ঞানীদের উপর পরোক্ষ চাপ তৈরি করে আরও তথ্য বের করতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমারজেন্সির প্রধান ডা: মাইকেল রায়ান বলেন যে হু চাইছিল নিজেই এই ভাইরাসের বিশ্লেষণ করতে। তা না হলে অন্যান্য দেশ লড়াইয়ের ময়দানে নামতে শুরু করে দিত। জানুয়ারির ২ তারিখ প্রথম ডিকোড করা যায় ভাইরাসটিকে আর ৩০ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী সর্তকর্তা জারি করে দেয় হু। কিন্তু ততক্ষণে ১০০ থেকে ২০০ গুণ বেড়ে গিয়েছে সংক্রমণ।
এখনও পর্যন্ত চিনের জনস্বাস্থ্য কমিশন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রক এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। গত কয়েক মাস ধরেই নিজেদের এই কাজকে রক্ষা করে আসছে চিন। যদিও বিশ্বের দাবি কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস বাদে বিশ্বকে এই তথ্য না দেওয়ার ফল এই অতিমারী। কারণ ডিসেম্বরেই চিনের অনেক হাসপাতালে অন্যরকমের নিউমোনিয়া চোখে পড়েছিল চিকিৎসকদের। তাঁরা সেই নমুনা ল্যাবেও পাঠায়। এদের মধ্যে ভিসন মেডিকেল জানায় যে এটি একটি নতুন ভাইরাস যার সঙ্গে সারস ভাইরাসের মিল আছে। তাঁরা উহান অফিসিয়ালসকে জানিয়েছিলেন এই বিষয়ে। কিন্তু চিনের কর্তৃপক্ষের তরফে একটি গোপন নোটিস জারি করে বলা হয়েছিল যে বিনা অনুমতিতে ভাইরাস সম্পর্কে কোনও তথ্য প্রকাশ করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য বিপদ এবং আগাম সর্তকতা জারি করতেও না করা হয়েছে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন