২০ ভারতীয় জওয়ানের হত্যায় নিন্দা প্রকাশ বিশ্বের, কূটনৈতিক জয় দেখছে নয়াদিল্লি
চিনা আগ্রাসনে হতচকিত আন্তর্জাতিক মহল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, মলদ্বীপ প্রকাশ্যে চিনা আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মৃত ভারতীয় সেনাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
চিনা আগ্রাসনে হতচকিত আন্তর্জাতিক মহল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, মলদ্বীপ প্রকাশ্যে চিনা আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মৃত ভারতীয় সেনাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা সেনার আক্রমণে প্রাণ গিয়েছে ২০ ভারতীয় সেনাকর্মীর। চিনা আগ্রাসনে হতচকিত আন্তর্জাতিক মহল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, মালদ্বীপ প্রকাশ্যে চিনা আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মৃত ভারতীয় সেনাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। চাপ বাড়ছে বেজিংয়ের উপর। তাই আগ্রাসনের মাত্রা বাড়িয়ে এবার চিনা বিদেশমন্ত্রীর দাবি, গালওয়ান উপত্য়াকা চিনের অংশ। তার আগে একই দাবি করেছিল চিনা সেনার পশ্চিম কমান্ড বাহিনীর মুখপাত্র।
Advertisment
এক বিবৃতিতে চিনা বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ঝাও লিজিওন জানিয়েছেন, ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পশ্চিমে গালওয়ান অবস্থিত। এখানে বহু বছর ধরেই টহল দেয় চিনা সেনা। গত এপ্রিল মাস থেকে ভারতীয় সেনা গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় একতরফা ভাবে রাস্তা, সেতু ও অন্য পরিকাঠামো তৈরি করছিল। চিন বারবার প্রতিবাদ জানালেও ফল হয়নি। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, ভারতীয় সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে উস্কানি দিতে শুরু করে। ৬ মে রাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চিনা এলাকায় ঢোকে ভারতীয় সেনা। ভোরের মধ্যে তারা ব্যারিকেড ও বেড়া তৈরি করে ঘাঁটি গেড়ে বসে। তার ফলে টহল দিতে পারছিল না চিনা সেনা। তাই সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ‘উপযুক্ত পদক্ষেপ’ করতে বাধ্য হয় চিনা সেনা। গোটা ঘটনার জন্য় বারতকেই দায়ী করেছে বেজিং।
আগেই গালওয়ান নিয়ে চিনের দাবি ‘অতিরঞ্জিত ও অচল’বলে জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন,‘চিন একতরফাভাবে স্থিতাবস্থা বদলের চেষ্টা করছে। এই হামলা পূর্ব নির্ধারিত ও পরিকল্পিত। দু’তরফের সেনার মৃত্যুর জন্য দায়ী চিন। দু’তরফের নেতৃত্ব যে সন্ধি করেছে তা সতর্কতার সঙ্গে চিন মেনে চললেই এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।’ উল্লেখ্য ১৯৬২ থেকেই গালওয়ান ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
Advertisment
গত সোমবার রাতের চিনা হামলার পরপরকই একাধিক রাষ্ট্র ও তাদের হাই কমিশনের তরফে মৃত ভারতীয় সেনার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। সীমান্ত বিরোধ ঘিরে এর আগেই চিনা সেনাদের একই পদক্ষেপ দেখা গিয়েছে বলে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পূর্ব এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিযয়ক মার্কিন বিদেশ দফতরের অতিরিক্ত সচিব ডেভিড স্টিলওয়েল বলেছেন, 'হংকং ও ভারতের উপর চিনা পদক্ষেপ গঠনমূলক নয়।'
মার্কিন বিদেশ সচিব পম্পেও টুইটে জানিয়েছেন, 'মৃত ভারতীয় সেনা কর্মীদের বলিদান সবাই স্মরণে রাখবে। তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই।' অতিরিক্ত সচিব স্টিলওয়েল পম্পেওর সঙ্গে চিনা স্টেট কাউন্সিলর ইয়ং জিয়েছির বৈঠকের ব্রিফিংয়ের সময় বলেন, 'ভারত, হংকং বা দক্ষিণ চিন সাগর বেজিংয়ের যেসব কার্যকলাপ দেখা যাচ্ছে তা মোটেই গঠনমূলক নয়।'
তাঁর কথায়, 'ভারত-চিন সীমান্ত বিতর্ক আমরা খতিয়ে দেখেছি। আগেও সীমান্তে চিনা আগ্রাসন ধরা পড়েছে। ২০১৫ সালে ভারতে যান চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং। তারপর সীমান্তে চিনের আগ্রাসন অতীতের তুলনায় আরও বেড়েছে। আমি জানিনা এই পদক্ষেপ রফার কৌশল, নাকি ওই এলাকায় শক্তি প্রদর্শনের জন্য করা হয়। ডোকললাম বা বর্তমানে লাদাখের পরিস্থিতি- এই ইস্যুতে আমাদের খুব একটা নজর ছিল না। এ নিয়ে চিনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রকাশ্যে কোনও কথাও হয়নি। তবে আমরা সদর্থক পরিস্থিতি দেখতে চাই।' ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ জাস্টারও পম্পেও কে উদ্ধৃত করে লাদাখে মৃত ভারতীয় জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করেছেন।
ফ্রান্স, জার্মান রাষ্ট্রদূতেরাও চিনা হানায় মৃত ভারতীয় সেনাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। ব্রিশ রাষ্ট্রদূত জন থমসন বলেছেন,'ভারতীয় মৃত ও জখম সেনাকর্মীদের পরিবার ও বন্ধুদের পাশে রয়েছি।' সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতে নিযুক্ত জাপান ও মলদ্বীপের রাষ্ট্রদূতেরাও।
উল্লেখ্য, এই সব রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব-একটা ভালো নয়। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরই গোটবিশ্ব ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু, সীমান্ত সমস্যায় কোনও পক্ষ নিতে অনেক সতর্ক থাকে দেশগুলো। তা সত্ত্বেও চিনা আগ্রাসন নিয়ে আমেরিকা বাদে বাকিরা সরাসরি কিছি না বললেও ভারতীয় জওয়ানদের আত্মত্য়াগকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে।
আর এতেই কূটনৈতিক সুবিধা দেখছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতীয় সেনাদের প্রাণহানীতে শোক প্রকাশ করেছে। স্পষ্ট হচ্ছে যে, ভারত পূর্বপরিকল্পিত চিনা আগ্রাসনের শিকার। আমেরিকা ও অন্যান্য় দেশের চাপেই ভারতীয় সেনার হাতে মৃত চিনা সেনাদের সংখ্যা প্রকাশ করতে বাধ্য হবে বেজিং।