প্যাংগংয়ের দক্ষিণপ্রান্ত থেকে সেনা সরাতে হবে ভারতকে। তারপরই নয়াদিল্লির দাবি মেনে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় এপ্রিলের স্থিতাবস্থা ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। ভারত-চিন সেনার সপ্তম রাউন্ডের বৈঠকে এই সেনা সরানোর ক্ষেত্রে জোর দিয়েছে বেজিং। পাল্টা, প্যাংগংয়ের উত্তরপ্রান্ত লাল-ফৌজ মুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে ভারতের তরফে। ফলে, চিনের এই অনড় অবস্থানই দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি প্রশমণের উদ্যোগে নতুন করে বিরোধের সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা। সরকারি সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি প্রশমণে আলোচনা চালাচ্ছে দুই দেশের সেনা ও কূটনীতিকরা। কথা হয়েছে উভয় রাষ্ট্রের উচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যেও। কিন্তু তাতেও যে অবস্থায় খুব একটা ফারাক হয়েছে তেমনটা নয়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে বাহিনী না সরানোর বিষয়ে অনড় লাল-ফৌজ। মাঝে মধ্যেই আগ্রাসী হয়ে উঠছে তারা। এই অবস্থায় পাল্টা ভারতীয় সেনাও প্যাংগংয়ের দক্ষিণপ্রান্তের বেশ কয়েকটি পাহাড় চূড়া নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে প্যাংগংয়ের উত্তর অংশে চিনা সেনার অবস্থান ও দক্ষিণে ভারতীয় বাহিনী রয়েছে। এই অবস্থায় চলতি সপ্তাহে দুই দেশের সেনা ও বিদেশ দফতরের সরকারি আধিকারিকদের মধ্যে সপ্তম পর্যায়ের বৈঠক হয়। জানা গিয়েছে সেই বৈঠকেই উভয় রাষ্ট্রেরর মধ্যে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চিন প্যাংগংয়ের দক্ষিণ অংশ থেকে সেনা সরাতে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
সূত্রের খবর, চিনা আগ্রাসনের মোকাবিলায় ভারতও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার সাতটি পয়েন্ট পেরিয়েছে। লাদাখ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক আধিকারিকের কথায়, 'চিনা সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এ দেশে ঢুকছে। পাল্টা ভারতের সেনাও নিয়ন্ত্রণরেখায় সাতটি জায়গা পার করেছে। চিন এখনও অপোসের আলোচনায় আধিপত্ত রেখেছে কেন এমনটা মনে করা হচ্ছে? বাস্তব অনেকটাই ভিন্ন।' উল্লেখ্য, অগাস্টে চুশুল সাব সেক্টরের অধিকাংশ এলাকা ভারতীয় সেনা দখলের পরই প্যাংগংয়ের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ভারতীয় বাহিনী সরানোর উপর জোর দিয়েছে চিন।
প্যাংগংয়ের দক্ষিণ অংশের বিভিন্ন পাহাড় চূড়া থেকেই চিনা সেনার কার্যকলাপ ও মলডোতে লাল-ফৌজের আগ্রাসনের উপর নজর রেখেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সূত্রের খবর, চিন দক্ষিণ প্যাংগং থেকে ভারতকে সেনা সরাতে বললে জবাবে নয়াদিল্লি বলেছে, দুই দেশকেই সমান তালে নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
তবে, ভারত-চিন সপ্তম রাউন্ডের সেনা বৈঠকের পর নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সরানোর ক্ষেত্রে সহমতের কথা যৌথ বিবৃতি জানানো হলেও একে অপরকে শর্ত প্রদানের বিষয়টির কোনও উল্লেখ নেই।
সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমণ ও সেনা সরানোর বিষয়ে মস্কোয় ভারত-চিন প্রতিরক্ষা ও বিদেশমন্ত্রীস্তরে বৈঠক হয়। সেখানেই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও নতুন করে য়াতে বিরোধ না বাধে তার জন্য সহমত পোষণ করা হয়েছিল। কিন্তু, প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিষয়ে বেজিংয়ের ভূমিকা নিয়ে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলল নয়াদিল্লি। সপ্তম রাউন্ডের বৈঠকে চিনের দাবি সেই সন্দেহকে আরও উস্কে দিল।
এই প্রেক্ষাপটেই যেকোন পরিস্থিতির জন্য বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার কথা বলা হয়েছে। লাদাখে নিয়ন্ত্রণরেখার অধিক উচ্চতাতেও শীতে সেনা মোতায়েনের প্রস্তুতি সেরেছে বাহিনী।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন