তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। চিনের মূল ভূখণ্ড শিনজিয়াং এবং তিব্বতকে সংযুক্ত করতে একটি নতুন রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে বেজিং। এই রেলপথ আকসাই চিনের মধ্যে দিয়ে যাবে। যা ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার খুব কাছ দিয়ে পাতা হবে। ফলে রেলপথ তৈরির পরিকল্পনা করেছে বেজিং। সীমান্তে চিনের এই নির্মাণের উপর কড়া নজর রাখছে নয়াদিল্লি। ভারত-চিন সীমান্তে গত ৩৩ মাসের বেশি সময় ধরে উভয় দেশের সেনা মোতায়েন রয়েছে। তার মধ্যেই আকসাই চিনে বেজিংয়ের রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা আদতে সেদেশের আগ্রাসনের মনভাব স্পষ্ট করে বলে মনে করছে ভারত।
বর্তমানে আকসাই চিনে বেজিংয়ের শাসন লাগু আছে। ৫০য়ের দশকের শেষ অর্ধ থেকেই দিল্লির দাবি ওই অংশ কাশ্মীরের লেহ-র অংশ। কিন্তু চিনের দাবি ওই এলাকা তাদের। এই নিয়ে দু'দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। তার মধ্যেও গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে শিনজিয়াং-তিব্বত হাইওয়ে নির্মাণ করেছিল চিন। যা নিয়ে ৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধ হয়েছিল।
সেই বিতর্কিত অংশেই দেশের ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্তর্গত প্রকল্পরূপে রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে বেজিং। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রেল নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ ১,৪০০ কিলোমিটার। গত সপ্তাহে চিন জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই রেলপথের দৈর্ঘ ৪,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো হবে। যা বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সাল নাগাদ ওই অংশে চিনা রেল চলাচল করবে।
সীমান্ত এলাকায় চিন ক্রমাগত সমরাস্ত্র সহ লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। একদিকে সীমান্তকে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি তরান্বিত করতে মরিয়া বেজিং। প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকার সঙ্গে মূল ভূখণ্ডকে জুড়তে একের পর এক নির্মাণ চালাচ্ছে তারা।
চিনা পরিকল্পনার উপর নজর রেখেছে ভারত। পাল্টা চিন সীমান্তের কাছে কৌশলগত রেললাইন নির্মাণে প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছে দিল্লি। সীমান্ত এলাকায় রেলের চারটি প্রস্তাবিত লাইন ঘোষমা করা হয়েছে। তিনটি দেশের উত্তর-পূর্বে এবং একটি উত্তরে। ১,৩৫২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় রেলপথ পাতা হবে।
পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ এবং লাদাখে ৪৯৮ কিলোমিটার ভানুপলি-বিলাসপুর-মানালি-লেহ লাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৮৩,৩৬০ কোটি টাকার আনুমানিক এই প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে হবে। এই কৌশলগত লাইন সম্পূর্ণ হলে, চিনের কিংহাই-তিব্বত লাইনকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেললাইন হবে।
অন্য তিনটি রেললাইন হল অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তের সাথে লিঙ্ক- মিসামারি-টেঙ্গা-তাওয়াং (৩৭৮ কিলোমিটারে, ৫৪,৪৭৩ কোটি টাকা খরচ); পাসিঘাট-তেজু-রূপাই (২২৭ কিমি,৯,২২২ কোটি টাকা খরচ), উত্তর লখিমপুর-বামে-সিলাপাথার (২৩,৩৩৯ কোটি টাকায় তৈরি হবে ২৪৯ কিলোমিটার)। এসব লাইনের ডিপিআর প্রস্তুত।
এগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে 'কৌশলগত লাইন' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুসারে নির্মিত হচ্ছে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ব্যয় বহন করছে। রেলেরর একজন মুখপাত্র বলেছেন, 'রেলওয়ে এবং প্রতিরক্ষার মধ্যে আলোচনার পরে এই লাইনগুলির উপর পর্যালোচনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'