সীমান্তে উত্তেজনা। তারই মধ্যে বেজিংয়ের নজরে ১০ হাজার ভারতীয়। চিনা সরকার ও চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত শেনজেন ভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ঝেনহুয়া এই নজরদারির কাজ করছে। 'হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার' এবং 'চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের' লক্ষ্যেই এই কাজ করা হচ্ছে বলে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তমূলক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
নজরে রয়েছেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও তাঁদের পরিবার। এমনকী তালিকায় নাম রয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। নজরে একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ন্যূনতম ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ১৫ অফিসার, সিডিএ বিপিন রাওয়াত, দেশের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে সহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। এছাড়াও লোকপালের বিচারপতি, ক্যাগ প্রধান জি সি মুর্মূ, শিল্পপতি রতন টাটা, গৌতম আদানি, বিনিয়োগকারী নিপুন মেহেরা, ভারত পে'র প্রতিষ্ঠাতা সহ ভারতের বিশিষ্ট শিল্পপতিরা।
ভারতেক রাজনৈতিক, সরকারি প্রতিষ্ঠান বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের প্রথম সারির ব্যক্তিত্বরাই শুধু নন, নজরদারির তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের গণ্যমান্যরা। আমলা, বিচারপতি, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবীদ থেকে শুরু করে চিনা নজরদারিতে রয়েছেন সাংবাদিক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, সামাজিক অধিকারের আন্দোলনকারীরা। এমনকী, একশরও বেশি অর্থনৈতিক অপরাধ, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, মাদক-সোনা ও অস্ত্র পাচারও চিনা নজরদারির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
খেলাধুলা, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তালিকায় নাম রয়েছে, প্রাক্তন ক্রিকেটার শচিন তেন্ডুলকার, চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনগাল, ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী সোনাল মানসিং, প্রাক্তন অকাল তখত জেঠেদার গুরুবচন সিং, চার্চের বেশ কিছু বিশপ এবং আর্চবিশপ, রাধে মা, দ্বিতীয়বারের মতো শিরোমণি গুরুদ্বার নিবন্ধ কমিটিতে নির্বাচিত মহিলা জগির কৌর এবং নিরঙ্কারী মিশনের হরদেব সিংয়ের।
নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা চরমে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভারতীয় ও চিনা সেনা। ভারতের বিরুদ্ধে কার্যকলাপে বেশ কয়েকটি প্রতিবেশীকে মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে। তখন জেনহুয়া ডেটা ইনফরমেশন টেকনোলজি কোঃ এই নজরদারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য এই সংস্থার দাবি, তারা চিনা গোয়েন্দা বাহিনী, সেনা ও নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
সংস্থার ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, আরব আমিরশাহীর তথ্যসমহুও রয়েছে। গুয়াংডং প্রদেশের শেনঝেন শহরে সংস্থার নেটওয়ার্ক রিসার্চে তথ্য জমা রয়েছে।
ঝেননহুয়া ২০-১৮ সালের এপ্রিলে সংস্থা হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছিল এবং চিন জুড়ে ২০ প্রসেসিং কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। সংস্থা তার ক্লায়েন্ট হিসাবে চিন সরকার এবং সেনা গণ্য করে থাকে। অর্থাৎ তথ্যসমুহ চিনা সরকার, শাসক দল ও সেনার জন্য সংগ্রহ করে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে সংস্থার ওয়েবসাইটে উল্লেখিত ই-মেইলে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রশ্ন করা হলে তার কোনও জবাব মেলেনি। এমনকী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ওয়েবসাইটটি অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। এরপর জেনহুয়ার প্রধান কার্যালয় দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি পৌঁছালে সংস্থার তরফে কর্মীরা কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি। তা 'ট্রেড সিক্রেট' বলে জানানো হয় সংস্থার তরফে।
যদিও দ্য ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস দিল্লির চিনা দূতাবাস সূত্রে জানতে পেরেছে যে, কোনও প্রযুক্তি সংস্থার কাছে অন্যদেশের কোনও ব্যক্তি, সংস্থা তথ্য থাকলে তা চিনা গোয়েন্দা ও সেনাকে দেওয়ার কথা চিনা সরকার বলেনি। কিন্তু, জেনহুয়া দাবি করেছে চিনা সরকার ও সেনা তাদের ক্লায়েন্ট। এই দাবি কি সঠিক? চিন সরকার যদি ওসিআইডিবি ডেটা ব্যবহার করে, তবে কী উদ্দেশ্যে? এর জবাব অবশ্য চিনা দূতাবাসের সেই সূত্র দেননি। এক্ষেত্রে বিদেশে ব্যবসার জন্য চিন স্থানীয় আইন মোতাবেক সংস্থাগুলোকে পরিচালিত হওয়ার কথাই বলে বলে জানানো হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
Read in English