Advertisment

'নিখোঁজ' হয়ে গেলেন চিনে করোনা মহামারীর আসল চেহারা দেখানো সাংবাদিক

চেন চিউশি'র সঙ্গে গত তিনদিন ধরে কোনও যোগাযোগ করা যায় নি। এবং শুক্রবার সারাদিন নীরব থাকার পর সন্ধ্যায় একটিমাত্র ভিডিও পোস্ট করেন ফাং বিন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
coronavirus china

নিখোঁজ চিনা সাংবাদিক। ছবি: ইউটিউব থেকে

গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে চিনে করোনাভাইরাস মহামারীর কেন্দ্রবিন্দু উহান থেকে নিয়মিত বাইরের দুনিয়ায় খবর পাঠাচ্ছিলেন দুই চিনা 'সিটিজেন জার্নালিস্ট' বা 'নাগরিক সাংবাদিক' চেন চিউশি এবং ফাং বিন। নিজেদের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও সম্প্রচারের মাধ্যমে পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে বার্তা দিচ্ছিলেন তাঁরা। এই ভিডিওগুলি টুইটার এবং ইউটিউবে বহুবার পোস্ট করা হয়েছে।

Advertisment

কিন্তু এখন এই দুজনের একজন নিখোঁজ।

চেন চিউশি'র সঙ্গে গত তিনদিন ধরে কোনও যোগাযোগ করা যায় নি। এবং শুক্রবার সারাদিন নীরব থাকার পর সন্ধ্যায় একটিমাত্র ভিডিও পোস্ট করেন ফাং বিন, যাঁকে এর আগে একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের লাশের ভিডিও তোলার অপরাধে কিছুক্ষণের জন্য আটক করে কর্তৃপক্ষ। সেই মুহূর্তেরও ভিডিও তোলেন ফাং বিন, যখন 'হ্যাজম্যাট' (hazmat বা hazardous material) বা প্রতিরোধ-স্যুট পরা কিছু অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের দরজা ভেঙে তাঁকে কোয়ারান্টিনে রাখার উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে যায়। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনালাইনে সোচ্চার হয়ে ওঠেন শয়ে শয়ে মানুষ, দাবি ওঠে ফাং বিনকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার।

আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্ক: ‘চিন চাইলেই সাহায্যের হাত বাড়াবে ভারত’, জিনপিং-কে চিঠি মোদীর

চিনে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা থাকার দরুন মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রচারিত হচ্ছিল চেন এবং ফাংয়ের পোস্টগুলি। করোনাভাইরাসের খবর ছড়াতে শুরু করার পর থেকেই আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে চিনা কর্তৃপক্ষের ইন্টারনেট প্রহরা, যার ফলে "নিয়ন্ত্রিত তদারকি"-তে রয়েছে চিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যেমন Weibo, Tencent পরিচালিত WeChat, এবং ByteDance-এর মালিকানাধীন Douyin. তদারকির ফলে ইতিমধ্যেই অচল করে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত করেন যে চিকিৎসক, তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ঝড় ওঠে, বিভিন্ন পোস্ট এবং কমেন্ট মুছে ফেলে তা শান্ত করারও চেষ্টা হচ্ছে অনবরত।

এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত টুইটারই হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্যের একমাত্র উৎস। চিনে অবশ্যই নিষিদ্ধ টুইটার, তবে ফায়ারওয়াল এড়িয়ে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন)-এর মাধ্যমে টুইটারে আসছেন অনেকেই।

তাঁদের চারপাশে যা ঘটছে, তা নথিভুক্ত করে রাখছেন অজস্র চিনা নাগরিক, তবে তাঁদের মধ্যেও সবচেয়ে দৃশ্যমান, এবং জনপ্রিয়, ছিলেন চেন চিউশি। উহানের বাসিন্দারা এই মহামারীর কিছু হাড়হিম করা ভিডিও তুলেছেন, যেগুলির মধ্যে রয়েছে চিকিৎসার অভাবে মৃত রুগীদের লাশ, হাসপাতালে কোয়ারান্টিনে থাকা রুগীদের বিক্ষোভ, এবং সেন্সরশিপ বলবৎ করার উদ্দেশ্যে দরজায় দরজায় পুলিশের কড়া নাড়া। এবং এই ভিডিওগুলি প্রদর্শনের একমাত্র মঞ্চ আপাতত টুইটার।

আরও পড়ুন: ভারতে করোনা আটকাতে জীবনদায়ী ওষুধ মজুত করতে শুরু করল সরকার

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলস্রোতের মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে প্রাথমিকভাবে কিছুটা ছাড় দিলেও মহামারী সংক্রান্ত খবর বেলাগাম ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ফের একবার সোশ্যাল মিডিয়াকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসছে চিনের শাসক কমিউনিস্ট পার্টি।

চলতি সপ্তাহে অসংখ্য WeChat ব্যবহারকারী অভিযোগ জানিয়েছেন যে চ্যাট গ্রুপে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত আলোচনার পরই অচল করে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট। এর ফলে তাঁরা শুধু যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারছেন না তাই নয়, হাতে পাচ্ছেন না WeChat ওয়ালেটে রাখা তাঁদের টাকাও। স্বেচ্ছা-নিয়ন্ত্রণ করছেন আরও অনেকে, এবং নিজেদের চ্যাট গ্রুপে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কোনোরকম আলোচনা না করতে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন চেনা পরিচিতদের।

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না চেন চিউশির সঙ্গে। তাঁর বন্ধুরা চেনের টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি মেসেজের মাধ্যমে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটা থেকে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছেন তিনি। সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ তাঁকে মেসেজ করে জানতে চায় তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত কিনা। সেই মেসেজেরও কোনও উত্তর এখনও আসে নি।

coronavirus
Advertisment