ভারত সফরে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। গত দু'বছর ধরে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দু'দেশের মধ্যে অচলাবস্থা চলছে। এখনও চূড়ান্ত কোনও সমাধান সূত্রও বেরোয়নি। দফায়-দফায় সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে বৈঠক হয়েছে। লাদাখ-জট এখনও কাটেনি। জারি থাকা এই অচলাবস্থার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দিল্লি পৌঁছেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই।
যদিও চিনা বিদেশমন্ত্রীর এই সফরের কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছিল না। বেজিং বা দিল্লি কারও তরফেই ওয়াং ই-র ভারত সফর নিয়ে আগে থেকে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ঝটিকা এই সফরে শুক্রবার ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই।
ভারত-চিন সম্পর্ক প্রসঙ্গে এর আগের দিন আলমা ম্যাটার সেন্ট স্টিফেনস কলেজে বক্তৃতার সময় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছিলেন, "গত দু'বছরে চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যে মোড় নিয়েছে, কয়েকজনই তা বুঝতে পেরেছেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য বিস্তৃত বিকল্প একটি রাস্তা তৈরি করাই ভারতীয় কূটনীতির একটি বড় দায়িত্ব। এর মানে হতে পারে একাধিক। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করা কিংবা অন্যান্য সহায়ক পদক্ষেপ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আমাদের নীতি ও কাজের জন্য বোঝাপড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।''
বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, "কূটনৈতিক আলোচনা নিয়ে চিনও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিল। কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি ২০২০-এর মে মাস থেকে সামরিকস্তরেও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।''
আরও পড়ুন- ভারত স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিদেশনীতিতেই চলবে, স্পষ্ট করলেন জয়শংকর
উল্লেখ্য, ইসলামাবাদে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর সঙ্গে বেজিঙের সংযুক্ত হওয়ার বিষয়ে ভারতের দ্বিতীয় বিবৃতি জারির কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চিনের বিদেশমন্ত্রী দিল্লির অতিথি হয়ে এলেন। অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর সঙ্গে বেজিঙের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এর আগে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছিলেন, "যে সব দেশ এবং সরকার এই ধরনের অনুশীলনের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে তাদের খ্যাতির উপর এর প্রভাব বুঝতে হবে।" ভারতের এই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াং-এর এই সফর কূটনৈতিক দিক থেকেও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
ঠিক একদিন আগে, ওআইসি সম্মেলনে জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয় উল্লেখ করার সময় চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াংয়ের মন্তব্যকেও "অপ্রত্যাশিত" বলে ভারত প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইসলামাবাদে বক্তৃতার সময় ওয়াং বলেছিলেন, ''কাশ্মীরে আমরা আজ আবার আমাদের অনেক ইসলামিক বন্ধুর ডাক শুনেছি। চিনও একইভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।"
তবে বেজিংয়ের এই পাকস্তুতির পরেই কড়াবার্তা দেয় দিল্লিও। ভারতের সাফ বার্তা, ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি সম্পর্কে অন্যদের রায় নেবে না।' উল্লেখ্য, ভারত সাধারণত তাইওয়ান, তিব্বত, হংকংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের বিরুদ্ধে চিনের নৃশংস আচরণ বা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও সমালোচনার পথে কখনই হাঁটে না।
Read full story in English