দেশের প্রধান বিচারপতির আপত্তিতে সিবিআই প্রধানের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেন মোদী সরকারের আস্থাভাজন দুই প্রার্থী। শুধু প্রধান বিচারপতি নয়, ওই দু’জনের বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন লোকসভার প্রধান বিরোধী দলের নেতাও। ফলে, ৩-সদস্যের কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরুদ্ধে যাওয়ায় বাতিল হলেন রাকেশ আস্থানা এবং ওয়াইসি মোদী। সিবিআই প্রধান নিয়োগের যে ৩-সদস্যের কমিটি, সেই কমিটির নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী। বাকি দুই সদস্য প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্না এবং কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী।
লোকসভার প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তাঁর এই অন্তর্ভুক্তি। সোমবার এই নিয়োগ নিয়ে কমিটি প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করে। সেই বৈঠকেই বাতিল হয়ে যায় মোদী-শাহ ঘনিষ্ঠ আস্থানা-মোদীর মনোনয়ন। বৈঠকে আইনি পথে গোয়েন্দা প্রধান নির্বাচনের পক্ষে সওয়াল করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্না।
প্রধান বিচারপতির মত, ‘চাকরি জীবনের ৬ মাস বাকি এমন কেউ সিবিআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার মাথায় বসতে পারে না।‘ শীর্ষ আদালতের একটি রায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি জানান, চাকরির মেয়াদ ছ’মাস বাকি থাকতে কোনও সরকারি আমলাকে পুলিশ প্রধানের ধরনের দায়িত্বে বসানো আইনবিরোধী। আপাতত বিএসএফ-এর ডিজি পদে কর্মরত আস্থানা। আগামী ৩১ অগস্ট ওই পদ থেকে অবসর নেবেন তিনি। অন্য দিকে, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র প্রধান প্রধান যোগেশচন্দ্র মোদী। তাঁর অবসর আগামী ৩১ মে।
তবে এই দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন সিআইএসএফ প্রধান সুবোধ জয়সওয়াল। ‘৮৭ ব্যাচের এই আইপিএস মহারাষ্ট্র ক্যাডার হিসেবে বেশ পরিচিত মুখ। এর পরেই দৌড়ে আছেন এসএসবি প্রধান কেআর চন্দ্র আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ সচিব ভিএসকে কৌমুদী।
এই তিন জনের মধ্যে জয়সওয়াল প্রবীণতম এবং আগামি বছরের সেপ্টেম্বরে অবসর নেবেন। চলতি বছর ডিসেম্বরে অবসর নেবেন চন্দ্র আর কৌমুদী অবসর নেবেন ২০২২ নভেম্বরে।র’এর শীর্ষ আধিকারিক পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে জয়সওয়ালের।
এদিকে, সরকারি আমলা হিসেবে আস্থানা এবং যোগেশ দু’জনেই একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন। সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা থাকাকালীন তৎকালীন সিবিআই প্রধান অলোক বর্মার সঙ্গে বিরোধ বাধে আস্থানার। আস্থানার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন বর্মা। পাল্টা বর্মার বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনেন আস্থানা। সেই নিয়ে তরজা চরমে পৌঁছলে বর্মাকে অপসারণ করে কেন্দ্র। পরবর্তী কালে আস্থানাকে বিএসএফ প্রধান করা হয়। সেইসময় বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাফাল দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে উদ্যত হওয়াতেই বর্মাকে সরানো হল। ‘সরকার-ঘনিষ্ঠ’ হওয়ায় আস্থানাকে দায়িত্ব দেওয়া হল অন্যত্র
একইভাবে, বিতর্কিত আমলা হিসেবে পরিচিত ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার তদন্তের দায়িত্বে থাকা যোগেশ। গুজরাত দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীকে ক্লিনচিট দিয়েছিলেন তিনি। গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নেতা হরেন পাণ্ড্যর খুনের মামলার দায়িত্বেও ছিলেন যোগেশ। গুজরাত দাঙ্গার তদন্তে মোদীর বিরুদ্ধে বয়ান দিয়েছিলেন পান্ড্য। জানিয়েছিলেন, দাঙ্গার আগে নিজের বাসভবনে আমলা এবং পুলিশদের ডেকে মোদী হিন্দুদের রাগ মেটানোর সুযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে খুন হয়েছিলেন হরেন। রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে খুন হতে হয়েছে বলে সেইসময় অভিযোগ করে হরেনের পরিবার। যোগেশের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও তুলেছিলেন তাঁরা।