নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ মন্ত্রিসভায় পাশ হয়েছে। এই বিলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন এবং পারসি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ভারত প্রবেশের সময়সীম ২০১৪ সাল নির্ধারিত হয়েছে। এই ধরনের মানুষদের জন্য ভারতের বসবাসের প্রমাণের সময়সীমাও ১১ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, মূল আইনে সংশোধনীর কারণ হিসাবে ধর্মীয় অত্যাচারের কথা রাখা হচ্ছে না, যদিও বিলে যা বিবৃত থাকছে তাতে তার লক্ষ্য এবং কারণ হিসেবে এ বিষয়টি স্পষ্ট। আগামী সপ্তাহে বিলটি সংসদে পেশ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিলে বলা হয়েছে, "নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০১৯ জারি হবার দিন থেকে যেসব এই আইনের আওতাধীন কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে বকেয়া কোনও ব্যবস্থা বা অবৈধ অভিবাসন অথবা নাগরিকত্বের বিষয়টি তাঁর নাগরিকত্বপ্রাপ্তির সঙ্গে মকুব হয়ে যাবে, যদি ওই ব্যক্তি এই ধারার আওতায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে ব্যর্থ না হন এবং কেন্দ্রীয় সরকার অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই আইনের আওতায় তাঁর আবেদন অগ্রাহ্য না করে।"
আরও পড়ুন, ইনার লাইন পারমিট কী, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব)-এর সঙ্গে তার যোগাযোগ কোথায়?
এই বিধিগুলি সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, লোকসভায় ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে এগুলি ছিল না। ২০১৬ থেকে বর্তমান সময়কালের মধ্যে আসামে এনআরসি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে এবং তাতে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, যাদের মধ্যে এনেকেই হিন্দু। এর ফলে শুধু সাধারণভাবে ওই এলাকাতেই নয়, আসামের বিজেপির পদাধিকারীদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
বিলের সংশোধিত ২নং ধারায় বলা হয়েছে, "২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি অথবা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা, এবং কেন্দ্রীয় সরকার পাসপোর্ট আইনের ৩নং ধারার ২ নং উপধারা অনুযায়ী যাদের বাদ দিয়েছেন এবং ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইনের বিধি অনুসারে..."
নাগরিকত্বের এই বিশেষ বিধি আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, এবং ত্রিপুরার যেসব উপজাতি এলাকা সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত এবং ১৮৭৩ সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন অনুসারে ইনার লাইন নোটিফিকেশনের আওতায় থাকা এলাকায় লাগু হবে না।
বিলের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য দেশভাগের ইতিহাস এবং উল্লিখিত দেশগুলি থেকে ক্রমাগত ভারতে অভিবাসন। এই তিনটি দেশেরই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং বিলের ভিত্তি হল, এই দেশগুলি থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে যেসব সংখ্যালঘুরা ভারতে চলে আসছেন, তাঁদের আশ্রয় দেওয়া।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) কী, এ নিয়ে এত বিতর্কই বা কেন?
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের নির্দিষ্ট রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে। এর ফলে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আশঙ্কাবশত নিজেদের দৈনন্দিন ধর্মাচরণ করতে পারেন না। এঁদের অনেকে ভারতে পালিয়ে আসেন আশ্রয়ের জন্য এবং তাঁদের ভ্রমণ সংক্রান্ত নথিপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও অথবা কোনও কাগজপত্র না থাকলেও তাঁরা এ দেশে থেকে যান।"
ভারত সরকার ২০১৫ ও ২০১৬ সালের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই অভিবাসীদের বিচারের আওতায় আসা থেকে রেহাই দিয়েছে, এবং ২০১৬ সালের নির্দেশ অনুসারে দীর্ঘ মেয়াদি ভিসার ব্যবস্থা করেছে। এই বিলে তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন। তবে এই বিলে ২০১৬ সালের বিলে উল্লিখিত বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার বিষয়টি পুনরুল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি সাংবাদিক আতিশ তাশিরের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যেই প্রভূত নিন্দিত হয়েছে।