থানা-পুলিশ সম্পর্কে চিরাচরিত আতঙ্কের ধারণা এ বার বদলাতে চলেছে শিশুদের মন থেকে। শিশুমনকে বিকশিত করতে থানাতেই গড়ে তোলা হয়েছে শিশু বান্ধব কক্ষ। খোদ সিভিক ভলান্টিয়া এর আঁকা ছবিতেই সেজে উঠেছে রেল পুলিসের শিশু বান্ধব কক্ষ। শৃঙ্খলারক্ষার নামে সরকারি ক্ষমতার ধ্বজা উড়িয়ে বেপরোয়া দাদাগিরি। সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার চরম পরিণতি দেখেছে মধ্যমগ্রাম। অন্যদিকে আর এক সিভিক পুলিশের তুলির টানেই সেজে উঠছে পুলিশের শিশু বান্ধব কক্ষ। ওই সিভিক পুলিশ কর্মী নিজে হাতে রং ও তুলি দিয়ে ওই কক্ষকে শিশুদের প্রিয় রঙিন ছবি এঁকে সাজিয়ে তুলেছেন।
রাজ্যের বিভিন্ন থানায় ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে শিশুদের জন্য শিশু বান্ধব কক্ষ। এবার বারুইপুর স্টেশনের জিআরপি থানায় চোখ ধাঁধানো সুন্দর সুন্দর রঙীন ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন সিভিক ভলান্টিয়ার গৌরশংকর মণ্ডল। গৌরের বাড়ি জয়নগরের নিমপীঠ এলাকার সাহাজাদাপুরে। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুধু চোখের দেখা দেখেই গৌরের আঁকা শেখা। আর তাঁর সেই আঁকাই এখন জায়গা পেয়েছে রেল পুলিসের শিশুবান্ধব কক্ষে। একটানা প্রায় ২৫ দিনের চেষ্টায় শিশুদের জন্য আঁকা নানা রকম ছবিতে গৌর ভরিয়ে তুলেছে ঘর। কোন শিশু থানায় এলে তাকে থানার লক আপ বা বন্দুকধারী পুলিসের সামেন রাখার কথা নয়। এতে শিশু মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তাই আদালতের নির্দেশে প্রত্যেক থানায় শিশু বান্ধব কক্ষ তৈরি করতে বলা হয়েছে। বারুইপুর জি আর পি থানায় কোন শিশু এলে তাকে শিশু বান্ধব ঘরেই বসানোর ব্যবস্থা করেছে রেল পুলিস। আর সেই ঘরকে সাজিয়ে তুলেছে সিভিক ভলান্টিয়ার গৌরশংকর। তার এই কাজের পুরস্কার হিসাবে বারুইপুর জি আর পি পুলিসের আধিকারিক জ্যোতির্ময় সরকার তাকে একটি সিভিক ভলান্টিয়ার পোষাক উপহার দিয়েছেন। পুলিসের সঙ্গে সিভিকের কাজ করতে করতেই গৌরিশংকর তাঁর শৈল্পিক প্রতিভাকে বিকশিত করেছে এই শিশু বান্ধব কক্ষের আঁকা দিয়ে। সিভিক ভলান্টিয়া গৌরশংকর জানান, “সরকারি আর্ট কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে সেখানে পড়তে পারি নি।"
তাঁর সবটা আঁকাই অন্যের আঁকা দেখে। এখানে তেল রং দিয়ে নানা রকমের ছবি এঁকেছেন গৌর শংকর। তাতে যেমন টম–জেরি রয়েছে, তেমনই রয়েছে নানা রকমের ফল, পাখি, পতঙ্গ, সূর্য এমনকি রাধা ও কৃষ্ণ।
এক পুলিশ আধিকারিক এ প্রসঙ্গে বলেন, “কখনও কোন শিশুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসতে হয়। কখনও আবার অভিভাবকেরাও থানায় বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আসেন। কোনও কোনও অপরাধের তদন্তে শিশুদের সঙ্গে কথা বলাও জরুরি হয়ে পড়ে। অধিকাংশ শিশু থানার পরিবেশে স্বচছন্দ নয়, সে কারণেই শিশু বান্ধব কক্ষ গড়ে তোলা হয়েছে।“
এখন দেখার এই শিশু বান্ধব কক্ষ শিশুদের মন থেকে পুলিশ-ভীতি দূর করতে পারে কি না ।