ভূমিধস! শ’য়ে শ’য়ে বাড়িতে ফাটল, প্রবল ঠান্ডায় আতঙ্কে দিশেহারা মানুষজন, উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে ভূমিধস! শনিবার (৭ জানুয়ারি), মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জোশীমঠে পৌঁছেছেন। তিনি একাধিক জায়গা ঘুরে দেখেন। পরিদর্শনের পরে, বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। পরবর্তী ৬ মাসের জন্য প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে প্রতি মাসে ৪হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণা। বাড়ি ভাড়া বাবদ এই টাকা তুলে দেওয়া হবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের হাতে।
জোশীমঠের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ধামি বলেন, “ভূমিধসের কারণে অনেক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে, সবাইকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ চলছে।কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
উত্তরাখণ্ডে বসে গেল মাটি, ফাটল প্রায় ৬০০ বাড়িতে। জোশীমঠের ভূমিধস! আবারও বাস্তুচ্যুতির ক্ষত সামনে উঠে এসেছে। গত এক দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ১৪৭৭ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। রাজ্যে এমন ৪০০ টিরও বেশি গ্রাম রয়েছে, যেগুলি দুর্যোগপ্রবণ বলে পরিচিত। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামের বাসিন্দাদের অবিলম্বে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে ফাটল দেখা দেয় জোশীমঠে। আবারও বিপদের আভাস সংকেত দিচ্ছে প্রকৃতি। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, রাস্তাঘাট, মাঠে ফাটল দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে যে অবিলম্বে ৯৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাময়িকভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জোরালো হচ্ছে পুনর্বাসনের দাবিও। দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে, রুদ্রপ্রয়াগ, চামোলি, বাগেশ্বর, পিথোরাগড়, উত্তরকাশী, তেহরি জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে এখনও পর্যন্ত ১৪৭৭ টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বিপর্যয়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ৪০০ টিরও বেশি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে। এমনিতেই ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা বলে পরিচিত।পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে রাস্তাঘাট, বেআইনি ভাবে পাহাড়ের ঢাল বরাবর বনভুমি কেটে হেটেল ব্যবসার রমরমা, সারা বছর মানুষের ঢল। এর ফলেই কী রুষ্ট প্রকৃতি উঠেছে প্রশ্ন। শয়ে শয়ে বাড়িতে ফাটল দেখা দিতেই প্রশ্নের মুখে সরকার।
স্থানীয়দের বিক্ষোভের পর, উত্তরাখণ্ড সরকার বৃহস্পতিবার পরিবারগুলিকে স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছে, ফাটলের ফলে শয়ে শয়ে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণকার্য পরিচালনার কাজ চলছে। ভূমিধসের কারণে যাদের ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রায় ৭০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
‘গেটওয়ে অফ হিমালয়’ নামে পরিচিত জোশীমঠের একাধিক এলাকায় ফাটল।গত ডিসেম্বর এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। শহর এলাকায় ফাটলের পাশাপাশি কৃষি জমিও ভূমিধসের কবলে পড়েছে। অনেক জায়গায় ফাটল এক ফুট পর্যন্ত চওড়া । ঘটনার পর তৎপর প্রশাসনও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি যৌথ দল গঠন করা হয়। দলটি দুদিন ধরে শহরের ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ঘুরে দেখেন।জোশীমঠ শহরে প্রায় দুই হাজার বাড়ি রয়েছে। রবিবার পর্যন্ত ভূমিধসের কারণে ৫৮১টি বাড়িতে ফাটল ধরেছে। সোমবার রাতে হঠাৎ করে অনেক বাড়িতে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিলে ধারাবাহিক ভূমিধসের ঘটনা সামনে আসে। এরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে। বদ্রীনাথ হাইওয়েতেও দেখা দিয়েছে ঘন ফাটল। ভূমিধসের ঘটনায় শুক্রবার রাজ্যের তরফে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। তারপরই আজ একাধিক এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি।