পরিবারই যখন নেই তখন টাকা নিয়ে কী করব? চোয়াল শক্ত করে প্রশাসনের আধিকারিকদের এমনটাই জানালেন হেমন্তভাই পারমা। মোরবি সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে চারজনের। হারিয়েছেন প্রিয় নাতিকে।
ঘটনাস্থল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বাড়িতে বসে শোকে পাথর তিনি। সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩৫ জনের। তার মধ্যে রয়েছে ৩৪ জন শিশু। শোকার্ত শহর! চারপাশে একটাই প্রশ্ন এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা কী কোন ভাবে এড়ানো যেত না? প্রিয়াঙ্কা ও আরশাদের পরিবারের প্রশ্ন, সেতু না সারিয়ে কীভাবে তা সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হল?
ঘটনায় প্রিয় জনকে হারিয়েছেন বিক্রম। তাঁর প্রশ্ন, "কেন আধিকারিকদের পরিবর্তে নীচু তলার কর্মীদের গ্রেফতার কথা হল? তিনি বলেন, ওরেভার কোম্পানির মালিকদের গ্রেফতার করা হয়নি। পৌরসভার আধিকারিকরা বলছেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে তা তারা জানতেন না। এটা কী করে সম্ভব? সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হল না”।
প্রশাসনের তরফে নিহতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের কথা বলা হলেও শোকে পাথর অনেক পরিবার সেই ক্ষতিপূরণ নিতে চাননি।
এদিকে ব্রিজ বিপর্যয়ে ভয়ঙ্কর দাবি পুলিশের। জং পড়া কেবল, সারানোই হয়নি সেতু, মোরবি ব্রিজ বিপর্যয়ে আদালতে এমনই তথ্য পেশ করেছে পুলিশ। ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ওরেভা সংস্থার ম্যানেজার দীপক পারেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিচারক এম জে খানকে তিনি জানিয়েছেন, “এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে ভগবানের ইচ্ছাতেই।” ঘটনায় ধৃত ৯ জনকে দশ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
আদালতে শুনানির সময় ডিএসপি বলেন, ব্রিজের বহনক্ষমতা না ঠিক করেই সরকারি অনুমতি না নিয়েই গত ২৬ অক্টোবর ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়। কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না, লাইফগার্ডও নিয়োগ করা হয়নি। বিক্রমের প্রশ্ন কেন সংস্থার মালিককে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি? কেন পুরসভার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়নি, কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে?
আরও পড়ুন : < দিল্লিতে ইডি দফতরে হাজির সুকন্যা, গরুপাচার মামলায় অনুব্রত-কন্যাকে জেরা চলছে >
পুলিশের তরফে আরও জানানো হয়েছে ব্রিজটি কেবলের উপরে ভর করে রয়েছে। কোনও তেল দেওয়া, বা গ্রিস দেওয়া হয়নি কেবলে। যেখান থেকে কেবল ছিঁড়ে যায় সেখানে জং পড়া ছিল। সেটা যদি সারানো হত এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। নমুনা সংগ্রহ করে তার গুণমান পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে সেগুলি খারাপ। সেগুলি তদন্ত করা হবে।”
সরকারি কৌঁসুলি এইচ এস দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জানিয়েছেন, “তদন্তে দেখা গিয়েছে, ঠিকাদাররা যোগ্যতাসম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। উপর উপর কাজ করেছেন তাঁরা।” এতগুলো প্রাণের দায় কে নেবে? টাকা দিলে কী সেই জলজ্যান্ত জীবন আর ফিরে পাওয়া সম্ভব প্রশ্ন নিহতদের পরিবারের।