বর্ণান্ধ যাঁরা, তাঁদের সিনেমা নির্মাণ এবং এডিটিং নিয়ে পড়াশুনোর সুযোগ দিতে হবে। বর্ণান্ধ আবেদনকারীদের বাদ দিতে পারবে না ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। সুপ্রিম কোর্ট এমনই নির্দেশ দিয়েছে। তারা বলেছে, সেই মতো পাঠ্যসূচিতেও বদল আনতে হবে এই প্রতিষ্ঠানকে।
বিশেষজ্ঞ কমিটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, রঙ চেনার ক্ষমতা এবং এডিটিংয়ের দক্ষতা দুটোর মধ্যে যোগ তৈরি করাটা অপ্রাসঙ্গিক। তারা সুপারিশ করেছে যে, সবাইকে এফটিআইআইয়ের সব কোর্সে সুযোগ দিতে হবে। যে কোনও ধরনের সীমাবদ্ধতা বা প্রতিবন্ধতা পেরিয়ে এগিয়ে চলা সম্ভব। এবং যে সব প্রার্থী বর্ণান্ধ তাঁদের কোর্সে পড়াশুনোর জন্য ব্যবস্থা করতে হবে, ফিল্ম এবং ডিপ্লোমা কোর্সে 'কালার গ্রেডিং মডিউল'বাদ দিতে হবে বা বিকল্প হিসেবে রাখতে হবে। এর আগে, ২০১৭ সালের মার্চে বম্বে হাইকোর্ট এক প্রার্থীকে বর্ণান্ধতার কারণে এফটিআইআই-তে প্রবেশে ছাড়পত্র না দেওয়ার মামলায় কোনও সুরাহা দেয়নি। মেডিকাল টেস্টে সামনে এসেছিল তিনি কালার ব্লাইন্ড।
বর্ণান্ধতা কী?
বর্ণান্ধ বলতে বোঝায় রং চেনার অক্ষমতা। স্বাভাবিক ভাবে রং দেখার যে ক্ষমতা, তা না থাকা। এক রঙের সঙ্গে অন্য রঙের পার্থক্য করা সম্ভব হয় না। যেমন, সবুজ এবং লাল, বা নীল রঙের ক্ষেত্রে এমন হতে পারে। রেটিনায় দু'ধরনের কোষ রয়েছে, যারা আলো বুঝতে পারে। রড (rod) কোষ, অনেকটা দণ্ডাকৃতির, এরা হালকা এবং গাঢ় আলোর মধ্যে ফারাক বোঝে। কোন (cone) , কিছুটা ত্রিশঙ্কু আকৃতির, যারা রং চিনতে পারে। তিন ধরনের 'কোন' রয়েছে, যারা লাল, সবুজ এবং নীল রং দেখতে পায়। এবং মস্তিষ্ককে সেই রং সম্পর্কে নির্দিষ্ট ইনফরমেশন পাঠিয়ে দেয়, এবং মস্তিষ্ক তা ব্যাখ্যা করে কী রং সেই সিদ্ধান্ত নেয়।
বর্ণান্ধ অর্থ, এক বা একাধিক ' কোন' কোষের অনুপস্থিতি, অথবা তাদের ঠিক মতো কাজ না-করা। ধরা যাক কারওর তিন ধরনের 'কোন' কোষ রয়েছে, কিন্তু সেগুলি ঠিক মতো কাজ করছে না, সে ক্ষেত্রে মৃদু বর্ণান্ধতা আসে। ফলে বলা যায়, বর্ণান্ধতার মাত্রা নানা ধরনের হয়ে থাকে। মৃদু বর্ণান্ধরা আলো ঠিক মতো থাকলে সব রংই ঠিকঠাক দেখতে পেয়ে থাকেন। আবার অনেকে আলো যাই থাকুক না কেন দুটো নির্দিষ্ট রঙের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। বর্ণান্ধতার চরম পরিস্থিতি হল, যখন কিনা দৃষ্টি পুরো সাদা-কালো। সব কিছুই তাঁদের চোখে ধূসর। তবে এমনটা খুব একটা ঘটে না।
স্পষ্টতায় কোনও সমস্যা নেই
চরম বর্ণান্ধতার না থাকলেও দৃষ্টির স্পষ্টতার কোনও সমস্যা হয় না। মৃদু বর্ণান্ধ এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা কখনও বুঝতে পারেননি তাঁদের প্রতিবন্ধকতা । যদিও বর্ণান্ধতার চিকিৎসা নেই, অথবা বলা যেতে পারে এই সমস্যাটি দূর করা যায় না। তবে, কয়েক ধরনের কনট্যাক্ট লেন্স কিংবা কালার ফিল্টার কাচের সাহায্যে প্রতিবন্ধকতা থেকে বেশ কিছুটা বেরোন যায়। কয়েকটি গবেষণা বলছে, জিন প্রতিস্থাপন থেরাপির মাধ্যমে পরিস্থিতির বদল ঘটানো যায়।
কী ভাবে বর্ণান্ধতা আসে?
বেশির ভাগের সমস্যাটা জন্মগত। কিন্তু অনেকে আবার পরেও এই সমস্যায় পড়তে পারেন। জন্মগত এই অসুখ জিনগত হয় সাধারণত। যাদের পরবর্তী কালে বর্ণান্ধতা আসে, দেখা যায় সেটি কোনও অসুখের ফলাফল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাবল্য বাড়তে থাকে। অনেক সময় গ্লকোমা, ডায়াবিটিস, অ্যালজাইমার্স, পারকিনসন্স, লিউকেমিয়া ইত্যাদি অসুখেও এই সমস্যা দেখা যায়। মদ্যপানের বদ অভ্যাস থেকেও এটি হতে পারে।
শেষে একটা কথা বলি, যখন কোনও বাচ্চা প্রথম সব কিছু শিখছে, তখনই বর্ণান্ধতা জনিত কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, তা বোঝা যায়, যদি বাবামা সে দিকে নজর দেন। রং চেনার অক্ষমতা, এক রং থেকে অন্য রঙের ফারাক করতে না পারা, ইত্যাদি থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। যদি জীবনের শুরুতেই বর্ণান্ধতা কিংবা মৃদু বর্ণান্ধতার বিষয়টি বুঝে নেওয়া যায়, তা হলে অনেক সুবিধা হয় আগামী জীবনের চলার পথে।
Read story in English