টিকার দ্বিতীয় ডোজকে অগ্রাধিকার দিন। রাজ্যগুলোকে চিঠি পাঠিয়ে এই অনুরোধ করল স্বাস্থ্য মন্ত্রক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন মঙ্গলবার টুইটারে নরেন্দ্র মোদী সরকারের এই নয়া টিকা-নীতির কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর মন্ত্রকের তরফেও এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।
হর্ষ টুইটারে লেখেন, ‘প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য ২টি কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি দ্বিতীয় টিকা প্রদানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং টিকার অপচয় বন্ধ করার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।‘ যাঁরা প্রথম টিকা নিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, ‘কোনও অবস্থাতেই দ্বিতীয় টিকা নেওয়া থেকে বিরত হবেন না।‘
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ এবং করোনা প্রতিরোধে প্রযুক্তি ও তথ্যগত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির চেয়ারম্যান আর এস শর্মা মঙ্গলবার কোভিড মোকাবিলা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য এবং বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কাছে তাঁরা সুপারিশ করেন, কেন্দ্রের পাঠানো করোনা টিকার ৭০ শতাংশ যেন টিকার দ্বিতীয় ডোজে ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইতিমধ্যেই যাঁরা প্রথম টিকা নিয়েছেন, তাঁদের পরবর্তী চাহিদা পূরণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।‘ তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রয়েছে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এদিকে, একটা সময় ছিল অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছিল দিল্লি। করোনায় মৃতদের দাহ কোর্টে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছিলেন শ্মশানকর্মীরা। কিন্তু সেই আবহের অনেকটা উন্নতি হয়েছে দিল্লিতে। শুধু লকডাউনে ভর করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকাতে পেরেছে দিল্লি। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এই আশার কথা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত শুধু টিকারই অভাব রয়েছে দিল্লিতে। তবে দেশে যে গতিতে টিকা তৈরি হচ্ছে, তাতে সমস্ত দেশবাসীকে টিকা দিতে দিতে বছর দুয়েক লেগে যাবে। ততদিনে সংক্রমণের আরও অনেকগুলি ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে দেশে, আশঙ্কা কেজরিওয়ালের।
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র দুটি টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার ভ্যাকসিন দিয়ে চাহিদা মেটানো যাবে না। দরকারে আরও বেশি সংখ্যক সংস্থাকে টিকা উৎপাদনের বরাত দেওয়া হোক। টিকার চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনে ভারতকে করোনামুক্ত করতে হলে প্রচুর টিকা দরকার। এই বিপুল চাহিদার যোগান দিতে কেন্দ্রের উচিত বেশ কয়েকটি সংস্থার মধ্যে টিকা উৎপাদনের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া।’
এ ব্যাপারে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে কেজরী বলেন, ‘ভারতে এই মুহূর্তে মাসে মাত্র ৬-৭ কোটি টিকা উৎপাদন হচ্ছে, এমন চললে দেশের সবাইকে টিকা দিতে ২ বছর পেরিয়ে যাবে। ততদিনে আরও অনেক ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে দেশে।’
এদিন তাঁর রাজ্যে করোনার গ্রাফ নিম্নমুখী হওয়া প্রসঙ্গে কেজরিওয়াল জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। দিল্লি জুড়ে অক্সিজেনের জন্য যে হাহাকার দেখা গিয়েছিল, তাও এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এমনকি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা এবং আইসিইউ শয্যার আকাল নেই। কেজরি বলেন, ‘লকডাউনেরই সুফল পাচ্ছে দিল্লি, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউকে আটকানো গিয়েছে। এখন আর অক্সিজেন বা আইসিইউ শয্যার অভাবও নেই।’
তবে, যদিও দিল্লিবাসীর টিকাকরণ নিয়ে সরকার এখনও চিন্তিত। কেজরী বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য। টিকাকরণ। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র টিকারই অভাব রয়েছে দিল্লিতে।’ তিনি জানিয়েছেন, এখন দিনে ১.২৫ লক্ষ টিকা দেওয়া হচ্ছে দিল্লিতে। তবে খুব শীঘ্রই সংখ্যাটা দিনে ৩ লাখে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেক দিল্লিবাসীর টিকাকরণের লক্ষ্য স্থির করেছি আমরা।’